Thank you for trying Sticky AMP!!

সৌদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সংবিধানসম্মত নয়: মেনন

রাশেদ খান মেনন । ফাইল ছবি

সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারের প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। বৃহস্পতিবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তাঁরা এই প্রশ্ন তোলেন। এ সময় সংসদে সভাপতির আসনে ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এই চুক্তি সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম বলেছেন, সংসদ চলমান রয়েছে। অথচ এই চুক্তির বিষয়ে সংসদকে অবহিত করা হয়নি। এর মাধ্যমে সংসদকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে সংসদে ৩০০ বিধিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যা ও স্পিকারের রুলিং দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে ‘ডিফেন্স কো-অপারেশন বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সৌদি অ্যারাবিয়া’ নামের সমঝোতা চুক্তিতে সই করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান এবং সৌদি আরবের পক্ষে সই করেন দেশটির সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুতলাক বিন সালিম আল উজাইমিয়া।

রাশেদ খান মেনন তাঁর বক্তব্যে সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, এই চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাইন অপসারণের কাজ করবেন। এটি বিরোধপূর্ণ এলাকা। সবাই জানে ইয়েমেনে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে প্রতিমুহূর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিহত করতে। জাতিসংঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন, ইয়েমেনের ঘটনা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী সীমান্তে মাইন অপসারণ করবে কার জন্য? যারা একদিন কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম কুড়িয়েছিল, তারা কেন আজ মাইন অপসারণের নামে সেখানে জীবন দেবে। বাংলাদেশের সংবিধান যেটাকে অনুমোদন করে না। কেবল তা–ই নয়, ইয়েমেনের সীমান্তে যখন আমাদের সেনাবাহিনী থাকবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। সংবিধানে বলা আছে, কোনো বিরোধপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ অংশ নেবে না।

সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা—এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং এই সকল নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র (ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করিবেন; (খ) প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী পথ ও পন্থার মাধ্যমে অবাধে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও গঠনের অধিকার সমর্থন করিবেন; এবং (গ) সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, বিবিসি সংবাদে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের কথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার–অস্বীকার কোনোটিই করেননি। এর আগে জনগণের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, সৌদি আরবে মক্কা-মদিনার মসজিদ দুটি যখন আক্রমণের কবলে পড়বে, তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনো কোনো সেনাবাহিনী সৌদি আরবে পাঠাবে না।

মেনন বলেন, ‘এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও স্পষ্টভাবে কিছু বলছে না। কিন্তু আমরা যেটা জেনেছি ইতিমধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন পর্যায়ে এবং এর মধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ, সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। দুই দিক থেকে এই চুক্তি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রথম হচ্ছে সেনাবাহিনী মোতায়েন এটা জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, সংগতিপূর্ণ কি না। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর বিদেশে উপস্থিতিতে রাজনৈতিক ভাবমূর্তি কী হবে?

মেননের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ফখরুল ইমাম বলেন, আজ টেলিভিশনে দেখলাম একটা সামরিক চুক্তি হচ্ছে। এটা সংসদে আলোচনা করলে কী অসুবিধা ছিল? পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই জানতেন এই চুক্তি হবে। সংসদে না জানিয়ে, সংসদকে পাশ কাটিয়ে এগুলো করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?