Thank you for trying Sticky AMP!!

সৌদি থেকে হুসনা রাতে ফিরছেন

প্রতীকী ছবি

‘আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’—সৌদি আরব থেকে এমন আকুতি জানিয়ে স্বামীর কাছে ভিডিও পাঠানো গৃহকর্মী হুসনা আক্তার আজ বুধবার রাতে দেশে ফিরছেন। রাত ১১টা নাগাদ তিনি ফিরছেন বলে তাঁর স্বামী শফি উল্লাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

সৌদিতে গৃহকর্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সম্প্রতি স্বামীকে ভিডিও পাঠান হুসনা। শফি উল্লাহ সেই ভিডিও এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। শফি উল্লাহ দালাল, রিক্রুটিং এজেন্সি, সরকারের কাছে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান। ২৪ নভেম্বর হুসনার স্বামী স্ত্রীকে দেশে আনার ব্যাপারে ব্র্যাকের কাছেও আবেদন করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে তাঁকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আজ দেশে ফেরার বিষয়টি রিয়াদ বিমানবন্দর থেকে হুসনা নিজেই ব্র্যাককে নিশ্চিত করেছেন।

হুসনার বাড়ি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামে। আর্থিক সচ্ছলতা আনতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান ৭ নভেম্বর। ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি এজেন্সি তাঁকে গৃহকর্মীর চাকরি দিয়ে সেখানে পাঠায়।

আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে শফি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন,‘বিয়ার তিন মাসের মাথায় হুসনা বিদেশ যায়। যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই শারীরিক নির্যাতন, খাবার না দেওয়া, বেশি কাজ করানোসহ নানান অভিযোগ জানায়। দেশে ফিরাইয়্যা আনার জন্য ভিডিও পাঠায়। আজ ও খালি হাতেই ফিরতাছে। খালি হাতে আসুক। আমি চাই, ও খালি সুস্থ মতন ফিরা আসুক।’

শফি উল্লাহ জানালেন, তাঁদের বিয়ের আগে হুসনা সৌদি আরবে দুই বছরের বেশি সময় ছিলেন। তখন হুসনা ভালোই ছিলেন। হুসনা দালাল শাহীন মিয়ার কাছে ৭০ হাজার টাকা পেতেন। এবার শাহীন বলেছিলেন, হুসনা সৌদি আরবে কাজ করতে গেলেই কেবল সেই ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেবেন। তাই হুসনা সৌদি আরব যেতে বাধ্য হন। এইবার হুসনার সৌদি যেতে কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হয়নি।

শফি উল্লাহর বাড়ি নেত্রকোনায়। হবিগঞ্জে একটি রাইস মিলে কাজ করতে গেলে হুসনার সঙ্গে পরিচয় হয়, তারপর বিয়ে করেন তাঁরা। স্ত্রীকে দেশে ফেরানোর জন্য দৌড়াদৌড়িতে কাজটাও ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানালেন শফি উল্লাহ।

গতকাল মঙ্গলবার হুসনা নিরাপদে আছে বলে জানায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল শ্রম কল্যাণ উইং। প্রথম সচিব কেএম সালাউদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবে কর্মরত নারী গৃহকর্মী হুসনাকে উদ্ধারের জন্য কনস্যুলেট তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। নাজরান পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো অন্য একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হুসনা আক্তারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের উদ্যোগে উদ্ধারের পর সেফ হোমে রাখা হয়েছে। পুলিশের নজরদারিতে বর্তমানে তিনি নিরাপদে আছেন। তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে জেদ্দা কনস্যুলেটের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের একদিন পর আজ হুসনা দেশে ফিরছেন। দালাল শাহীন ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ দেখিয়ে ২২ হাজার টাকা বেতনে হুসনাকে সৌদিতে পাঠিয়েছিলেন।