Thank you for trying Sticky AMP!!

সৌরশক্তি হবে বিশ্ব জ্বালানির সমাধান

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সারা বিশ্ব এখনো মূলত কয়লা, তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। তবে জার্মানি, অস্ট্রিয়ার মতো ইউরোপের দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ুশক্তিনির্ভর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ছে। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল্যও কমছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে বিদ্যুতের বড় উৎস সৌরশক্তি। এই শক্তিকে কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। আর ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে সীমাবদ্ধ রাখতেও এটি সহায়তা করবে।
বর্তমানে জার্মানির ব্যবহৃত মোট জ্বালানির প্রায় ৩০ শতাংশ জোগান দেয় নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ুশক্তি। আর ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির মোট ব্যবহৃত জ্বালানির ৪৫ শতাংশ জোগান দেবে নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ুশক্তি। আর ২০৫০ সালের মধ্যে এটি হবে ৮০ শতাংশ।
জার্মানি ২০২২ সালের মধ্যে তাদের সব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করেছে দেশটি। এ বছরের ডিসেম্বরে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলে চালু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে সাতটি।
জার্মানির ফেডারেল ফরেন অফিসের জলবায়ু ও পরিবেশনীতি, টেকসই অর্থনীতি বিভাগের প্রধান থমাস মিয়েস্টার বলেন, মূলত ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনার পরে জার্মানি তার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বর্জ্য একটি বড় সমস্যা। জার্মানি ইতিমধ্যে পারমাণবিক বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণে ৩২ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে।
তা ছাড়া ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে জার্মানি। বর্তমানে কয়লা, তেল ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বদলে বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ুশক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অনেক ইউরোপীয় দেশ একইভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন, অস্ট্রিয়া ও সুইডেনের মতো দেশগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে জলশক্তি ব্যবহার করছে। গত শতাব্দীর শেষের দিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছিলেন, একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বা ২০৭০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের জ্বালানি খাত তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর থাকবে। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার যেভাবে ঘটছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপের জ্বালানি খাত হবে সৌর, বায়ু ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর।
বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোলজিক ইনস্টিটিউটের জলবায়ুবিষয়ক প্রধান ম্যাথিয়াস ডুয়্যে মনে করেন, বাংলাদেশের সৌর জ্বালানির প্রসারে যথেষ্ট জোর দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, জার্মানি বা ইউরোপীয় দেশগুলোতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে সূর্যের আলো পর্যাপ্ত। তারপরেও বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ অনেক কম।
বর্তমানে বাংলাদেশের জ্বালানির বড় উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও আমদানি করা তেল। ক্রমাগতভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারে তেল বা কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দীর্ঘ মেয়াদে এসব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হলে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সৌর জ্বালানির অংশ খুব কম। বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে জ্বালানি খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশীদারত্ব ১০ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করেছে। সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি প্রকল্প বা উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়।
সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশে অমিত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সৌরবিদ্যুৎ শুধু গ্রিডের বিদ্যুতের চাহিদা কমাবেই না, বরং সরকারের সামাজিক প্রতিশ্রুতিও পূরণ করবে। দেশের গ্রিডহীন সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছালে তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়বে।