Thank you for trying Sticky AMP!!

স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজানোর পর...

স্কুল ভবনের ভেতরে তালাবদ্ধ স্মৃতি মণি ও মণি দে নামের তৃতীয় শ্রেণির দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করে দেয়ালের ওপর দিয়ে পার করে দিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল বেলা তিনটায় চট্টগ্রামের সরকারি ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলে l প্রথম আলো

দুপুরে স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজানোর পর দৌড়ে হইচই করতে করতে একে একে বাসায় চলে যায় সব শিশু। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে স্কুলভবনে তালা লাগানোর পর চলে যান শিক্ষকেরাও। ঘণ্টাখানেক পর স্কুলের ঠিক সামনের সড়কের চটপটি বিক্রেতা কোথা থেকে যেন কান্নার শব্দ শুনতে পান। ভালোমতো খেয়াল করার পর তিনি বুঝতে পারেন, স্কুলের ভেতর থেকেই আসছে সেই শব্দ। কৌতূহলবশত স্কুলের সীমানাদেয়ালে উঠে উঁকি দিয়ে তিনি দেখতে পান, তালাবদ্ধ দ্বিতল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে দুই শিশু।

দেরি না করে কয়েকজন পথচারী ও আশপাশে থাকা কিশোরদের ডেকে ঘটনাটি জানান চটপটি বিক্রেতা জসীম উদ্দিন। এরপর তাঁরা সবাই দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে ভবনের তালা ভেঙে দুই শিশুকে উদ্ধার করেন। পরে সীমানাদেয়ালের ওপর দিয়েই তাদের বের করে আনা হয়। চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলের পাশে সরকারি ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলে এ ঘটনা ঘটে। আটকা পড়া দুই শিশু স্মৃতি মণি ও মণি দে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তারা প্রায় এক ঘণ্টা আটকে ছিল।

সপ্তাহের অন্যান্য দিন বিকেল সোয়া চারটায় ছুটি হলেও প্রতি বৃহস্পতিবার ছুটি হয় বেলা সোয়া দুইটায়। শুক্রবার (আজ) স্কুল বন্ধ থাকে। গতকাল দুই শিশুকে সময়মতো উদ্ধার করা না গেলে ছুটির ঘণ্টা সিনেমার মতো করুণ কাহিনি ঘটার আশঙ্কা ছিল।

১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ছুটির ঘণ্টায় দেখা যায়, ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের শৌচাগারে সবার অজান্তে আটকে পড়ে ১২ বছরের এক ছাত্র। তালাবদ্ধ শৌচাগার থেকে বের হওয়ার সব চেষ্টাই সে করে। ঈদের ছুটি ১১ দিনের। দুঃসহ প্রতীক্ষায় ১০ দিন কাটে তার। এরপর হার মানে সে।

দুই শিশু কীভাবে আটকা পড়ল, জানতে চাইলে ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুন নেছা প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগারে কেউ নেই—এটি নিশ্চিত হয়ে আয়া জাহেদা বেগম স্কুল ভবন ও ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি বাসায় যাওয়ার পথে শিক্ষা কর্মকর্তা মুঠোফোনে তাঁকে জানান, স্কুল ভবনের ভেতর দুই ছাত্রী আটকা পড়েছে। এটি শুনেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবার ফিরে আসেন। এর আগেই স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা তালা ভেঙে ছাত্রীদের উদ্ধার করেন।

প্রধান শিক্ষিক বলেন, ছুটি শেষে দুই ছাত্রী শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু চটপটি কিনে আবার কোন ফাঁকে ক্লাসরুমে চলে আসে, তা কেউ খেয়াল করেনি।

স্কুলের ভেতর সন্তানদের আটকা পড়ার খবর শুনে ছুটে আসেন দুই শিশুর মা ও বাবা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে মেয়েদের দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শিশুদের বুকে টেনে নেন তাঁরা।

স্মৃতি মণির মা ফিরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ের এক বান্ধবী বাসায় গিয়ে খবর দেয়, স্মৃতি স্কুলের ভেতর আটকা পড়েছে। শুনে তো আমার পরানে আর পানি নাই। এখন মেয়েকে দেখি কী যে ভালো লাগছে, বোঝাতে পারব না।’ স্মৃতি মণির বাবা শহীদুল আলম এ ঘটনায় যাদের অবহেলা রয়েছে, তাদের শাস্তির দাবি করেন। স্মৃতিদের বাসা চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির পুরোনো বিমান অফিস এলাকায়।

উদ্ধার হওয়া আরেক শিশু মণি দের বাসা নগরের মাস্টারপুলের বউবাজার এলাকায়। শিশুটির বাবা মেঘনাথ দে ডিসি হিল এলাকায় একটি নার্সারিতে কাজ করেন। মা সবিতা দে গৃহপরিচারিকা।

এই ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কি না, তা খুঁজে বের করা হবে বলে জানান স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি ও স্থানীয় জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভাগ্যগুণে শিশু দুটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল। কেননা, পরদিন ছিল শুক্রবার (আজ), ছুটির দিন। ছুটির ঘণ্টা সিনেমার মতো ঘটনাও ঘটতে পারত।