Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাচিপের কোন্দলে শিশু হাসপাতালের হাঁসফাঁস

আওয়ামী লীগের সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঢাকা শিশু হাসপাতালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা সময়মতো আসা-যাওয়া করেন না। হাসপাতালে সেবার মানও পড়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ডের সভাপতির পদ পাঁচ মাস খালি। বোর্ডের সভা নিয়মিত হচ্ছে না বলে দৈনন্দিন কাজ আটকে আছে। ওই পদে লোক বসানো নিয়ে স্বাচিপের দুই উপদল সক্রিয়। বর্তমান পরিচালককে রাখা না-রাখা নিয়েও এরা বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক মনজুর হোসেন প্রায় এক মাস হাসপাতালে যান না। গত শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়েছেন। গত রোববার হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বিলকিস বানুকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। উপপরিচালক হোসেন শহীদ কামরুল আলমকেও হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বাইরে একটি সভায় আছেন।

অধ্যাপক সমীর কুমার সাহা ১৯৮৩ সাল থেকে এই হাসপাতালে কাজ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেবার মান ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের হাসপাতালটির দিকে দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন বলেন, সভাপতির নাম প্রস্তাব করে নথি তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে ফিরলে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

দুটি পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব: ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সর্বশেষ সভা হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। প্রতি মাসে এই সভা হওয়ার কথা। রোগীদের খাবার ও ওষুধ বরাদ্দের জন্য বোর্ডের অনুমোদন দরকার হয়, সেই অনুমোদন বন্ধ আছে। জুলাইয়ের আগে হাসপাতালের বাজেট অনুমোদন হওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি। বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারীর পদোন্নতিও আটকে আছে বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায়।

স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভাপতির পদ থেকে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন গত ১০ মার্চ। এই পদের জন্য জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুনের নাম প্রস্তাব করে পরিচালক মনজুর হোসেন ২৭ জুন স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন।

পরিচালক স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইকবাল আর্সলানের সতীর্থ ও বন্ধু। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইকবাল আর্সলান মনজুর হোসেনকে সমর্থন করছেন। এ ব্যাপারে ইকবাল আর্সলান বলেন, তিনি কাউকে সমর্থন করছেন না। মনোনয়ন দেওয়া বা কাউকে কোনো পদে রাখা না-রাখা মন্ত্রণালয়ের কাজ।

অন্যদিকে স্থানীয় স্বাচিপের একটি অংশ সভাপতি পদে বিএমএর সাবেক মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে চায়। এরাই পরিচালককে অপসারণ করে আবদুল আজিজকে হাসপাতালের পরিচালকের পদে বসাতে চায়।

শারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য। সভাপতির পদটি অনেক দিন ধরে খালি। সরকার যদি ওই পদে আমাকে মনোনীত করে, আমার কোনো আপত্তি নেই।’

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের সঙ্গে পরিচালকের সম্পর্ক ভালো নয়। তিনি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সময় দেন না। এই অবস্থায় হাসপাতালের স্বার্থে নতুন পরিচালক দরকার। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তিনি আবদুল আজিজের নাম বলেন। আবদুল আজিজও এই পদের জন্য তাঁর আগ্রহের কথা প্রথম আলোকে বলেছেন।

আবদুল আজিজ ও তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, পরিচালক হাসপাতালে কম সময় থাকেন। চিকিৎসকদের পদোন্নতি আটকে রেখেছেন। নিজের অনুসারীদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করেছেন, যারা নিয়মনীতি মানছে না।

বিদেশে যাওয়ার আগে পরিচালক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যায় দাবি মানতে চাই না বলে অনেকে আমাকে পছন্দ করেন না।’ তিনি বলেন, অসুস্থ থাকার কারণে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, বোর্ডের চেয়ারম্যান না থাকার কারণে হাসপাতালের কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে।

পরিচালকের অনুসারীরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে স্বাচিপের উপদলটি হাসপাতালের ক্যানটিনের ইজারাসহ অন্যান্য সরবরাহ কাজে ভাগ বসাতে চায়। অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল আজিজ বলেন, ৫৬০ শয্যার এই হাসপাতালে শিশুদের সঙ্গে মা ও বাবারা আসেন। অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। তাঁদের সুবিধার্থে বারবার ক্যানটিন চালু করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করছে না।

পরিচালক ও স্থানীয় স্বাচিপের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে। এর প্রভাব পড়েছে সেবার ক্ষেত্রে। গত রোববার বেলা ১১টার পর চারজন চিকিৎসকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জানান, তাঁরা রাস্তায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছাবেন। একাধিক কর্মচারী বলেছেন, অনেক চিকিৎসক দেরিতে আসেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যান। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের টয়লেট নোংরা, দেখেই বোঝা যায়, নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ করে শিশু হূদেরাগ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রতি মাসে এই কেন্দ্রের পেছনে খরচ প্রায় ছয় লাখ টাকা। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়ার পর ১৮ মাসে এখানে মাত্র ২৬টি শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, ‘বিরোধ চলতে থাকলে শিশুদের চিকিৎসার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটিতে সেবা বলে কিছু থাকবে না। সবচেয়ে বিপদে পড়বে দরিদ্র মানুষ।