Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে

আহমেদুল কবীর।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার কথাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। হাঁচি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টসহ করোনা সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে, এমন কোনো রোগী হাসপাতালে এলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্কতার সঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে। বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

করোনা সংক্রমণের লক্ষণ থাকা রোগীদের হাসপাতালের পৃথক কোনো কক্ষে পরীক্ষা করাসহ সুরক্ষার সব ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এসব রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধা সরকার কিছুটা বাড়িয়েছে, আরও বাড়ানো দরকার। পরীক্ষার পর যদি ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে, তাহলে দ্রুত তাকে সরকার-নির্ধারিত হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে।

রোগীর জন্য সুরক্ষিত বিশেষ বাহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেসব চিকিৎসক, নার্স রোগীর কাছাকাছি যাবেন, তাঁদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি। কোনো সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস কর্নার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ, সরকারি হাসপাতালে অনেক রোগী আসে। সরকার-নির্ধারিত হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা করানো যাবে না।

প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীকে তা মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগালে সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ, চীনই একমাত্র দেশ, যারা সফলভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।

দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রথমত এর উৎসকে (বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে এটি ছড়িয়েছে, প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই জায়গায় বেশি জোর দিতে হবে) নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দ্রুত ন্যাশনাল রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্য কোনো শহরে বা অঞ্চলে করোনা যাতে না ছড়ায়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা। যেখানে করোনা কেস (শনাক্ত হওয়া) পাওয়া যাবে, সেখানেই আইসোলেশন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। বড় বিপদ যাতে না আসে, সে জন্য যত কষ্টই হোক, বিদেশফেরত ব্যক্তি এবং করোনার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আইসোলেশনে নিতেই হবে। সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে অন্য কেউ যাতে না আসে, সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতি নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। কোনোভাবেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের আইসোলেশনের বাইরে রাখা যাবে না। কারণ, সংক্রমিত ব্যক্তিরা এই ভাইরাস আরও ছড়িয়ে দিতে পারে।

করোনা মোকাবিলায় তৃতীয় যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটি হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। পোস্টার, লিফলেট, গণমাধ্যমসহ প্রচারণার যত রকম পদ্ধতি আছে, সব ব্যবহার করে মানুষকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো এবং সচেতন করা। সিটি করপোরেশনের কর্মী, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীসহ সবাইকে যুক্ত করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক খেলা খেললে লাভ হবে না।

চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে নজরদারির প্রক্রিয়া আরও মজবুত করা জরুরি। কারণ, প্রতিরোধের প্রথম ধাপই হচ্ছে রোগ নির্ণয় করা। রোগ নির্ণয় না করতে পারলে এর ভয়াবহতা আটকানো যাবে না। তিনটি বিষয়ে জোর দিতে হবে—ট্রেস (শনাক্ত), টেস্ট (পরীক্ষা) ও ট্রিটমেন্ট (চিকিৎসা)। এই তিন নীতি নিয়ে এগোতে হবে। আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিজেস—এই তিন প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। বিদেশফেরত না হলেও উপসর্গ থাকলেই দ্রুত পরীক্ষা করতে হবে। জেলা পর্যায়ে যে হাসপাতালগুলো করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোতে একই সঙ্গে পরীক্ষা এবং চিকিৎসার সুবিধা থাকা উচিত। এ ছাড়া নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও করোনা পরীক্ষার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা জরুরি।

সব মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলার কাজটি এগিয়ে নিতে হবে। জনসমাগম হয়, এমন সবকিছু অবশ্যই বাদ দিতে হবে। এমনকি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, সভা, সেমিনার, কনফারেন্স—সব বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে প্রয়োজন অনুসারে। খুব প্রয়োজন না হলে বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটি এখন ফোনেই করা যেতে পারে। মানুষের ভিড়ে করোনা দ্রুত ছড়াবে। মানুষকে জানাতে হবে, স্বাভাবিক ঠান্ডা, জ্বর, হাঁচি, কাশি হলে বাসায় চিকিৎসকের পরামর্শে থাকলেই চলবে। হাসপাতালে ভিড় করে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু তাঁদেরই দরকার, যাঁরা বিদেশফেরত এবং যাঁরা কোনো না কোনোভাবে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন।

আর কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন এক নয়। রোগের উপসর্গ যাদের আছে, তাদের আইসোলেশনে যেতে হবে। আর উপসর্গ না থাকলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আইসোলেশন কখনোই বাসায় হবে না, এটা হাসপাতালে করতে হবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, শুধু সচেতন করা নয়, মানুষকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কেও জানাতে হবে।

লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন