Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাস্থ্যসচিব বদল, মন্ত্রীর কী হবে?

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফাইল ছবি

সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া হলো। এখন প্রশ্ন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কী হবে? করোনা মহামারির এই সময়ে মন্ত্রণালয়ের দুই প্রধান কর্তাব্যক্তির বিরোধ, তাঁদের ব্যর্থতা ও পারস্পরিক সমন্বয়হীনতায় সরকার যেমন বিব্রত, মানুষও তেমন বিরক্ত। এসব বিষয় এখন আর রাখঢাক পর্যায়ে নেই।

কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা হচ্ছিল, ব্যর্থতার দায়ে দুজনকেই সরিয়ে দেওয়া হবে। এই আলোচনায় আরও এসেছে স্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্ট কিছু বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নাম, যাঁদের কেউবা মন্ত্রী, কেউবা সচিবের সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে কেবল সচিবকে সরিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে গতি আনা যাবে, এমনটি মনে করছেন না কেউ।

গত প্রায় তিন মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেকে অনেকটাই খেলো করে তুলেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, করোনা বিষয়ে এমন সব কাজ হচ্ছে, যা তিনি জানেন না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও তাঁকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বারবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান রেখে চলছেন, তাঁর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও অন্তত পরামর্শটুকু যেন নেওয়া হয়। একজন মন্ত্রী কোন পর্যায়ে গেলে গণমাধ্যমের সামনে এমন আবেদন রাখতে পারেন, তা অনুমান করা যায়। বাস্তবে মন্ত্রীর এই আবেদনেও সাড়া মেলেনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কমিটির প্রধান। এই অতিমারির সময় গোটা জাতি তাকিয়ে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, কাজকর্ম এবং উদ্যোগের ওপর। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতালে ভর্তি এবং কোভিড পরীক্ষা নিয়ে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়ে আছে। এসবের সমাধানে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম দৃশ্যমান নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই যে জাতীয় কমিটির প্রধান, সেটির কর্মকাণ্ড নিয়েও তিনি অসন্তুষ্ট। এসব কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় যার যার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক একাধিকবার বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হলেও অনেক কিছুই তাঁকে জানানো হয় না। তাঁর বক্তব্যে সমন্বয়হীনতার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, এই অতিমারির মধ্যে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হলে তা সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে। এ জন্য মূলত তাঁকে ‘পুতুল’ করে রাখা হয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে স্বাস্থ্যের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সরকারের ভেতরে-বাইরে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরই মধ্যে সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন আসে, মন্ত্রণালয়ের এই ব্যর্থতার দায় কি শুধুই সচিবের?

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার কাকে রাখবে, কাকে রাখবে না, এটি ভাবার সময় এখন কম। এখন দরকার হচ্ছে হাসপাতালে রোগীর ঢেউ ঠেকানো। তাঁর মতে, জনস্বাস্থ্যের চোখ দিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে দেখতে হবে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবায় জোর দিতে যা যা করা দরকার, তা করতে হবে। কে করবে, কীভাবে করবে সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনের।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-সচিবের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিষয়টি কমবেশি সবার জানা। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের বিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্য হয়ে পড়েছিল। পরে মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক দিন ধরে সচিব আসাদুল ইসলাম অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তিনি যেকোনো সময় চলে যাবেন, এমন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি নতুন সচিব কে আসছেন, তা নিয়ে চারদিকে আলোচনা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আব্দুল মান্নান, আলোচনায় তাঁরই নাম ছিল।

পরিবর্তনের আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামও আছে, এমনকি মুখে মুখে ঘুরছে সম্ভাব্য কয়েকটি নাম। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বদলের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে অতিমারির এই সময়ে মন্ত্রী সরালে মানুষের মধ্যে ব্যর্থতার বার্তা যেতে পারে। আরেকটি হচ্ছে, যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যে কয়েকজন সাংসদ বা চিকিৎসকের নাম আলোচনায় আসছে, তাঁদের অনেকে অতিমারির এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য নন বলে মনে করছেন অনেকেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, এমন মহামারির সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি, এটা সত্য। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে হাল ধরে থাকা, অন্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করা। তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে স্বাস্থ্যসচিব পরিবর্তনে দুটি ঝুঁকি দেখি। একটি হচ্ছে, আগের সচিব একটি টিম নিয়ে কাজ করছিলেন, যতটুকু হোক একধরনের বোঝাপড়া ছিল। আরেকটি হচ্ছে; নতুন সচিব যিনি আসবেন, তাঁর এ ধরনের পরিস্থিতি বুঝে উঠতে সময় লাগবে। তাঁর মতে, মন্ত্রীর বিষয়টি রাজনৈতিক, প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখভাল করছেন। তাঁর উপদেষ্টারা আছেন। তাই এই মুহূর্তে মন্ত্রী পরিবর্তন না হলেও খুব বেশি সমস্যা দেখি না।’