Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাস্থ্যের আবজাল ১৪ দিনের রিমান্ডে

আবজাল হোসেন

দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনকে ১৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
এর আগে আবজালকে দশ দিন করে মোট ২০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে দুদক। রিমান্ডে নেওয়ার স্বপক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এবং মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। অপরদিকে, রিমান্ডে নেওয়ার বিপক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন আবজালের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম।

উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত দুই মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত ২৬ আগস্ট আবজাল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আবজাল ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ জুন পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। একটি মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। আরেকটি মামলায় আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়। আর ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

গত বছরের ২২ জানুয়ারি আবজাল ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদ জব্দ (ফ্রিজ) করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের আদেশে আবজাল দম্পতির স্থাবর অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।
দুদক ও আদালত সূত্র বলছে,আবজাল হোসেন ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি আবজাল হোসেন একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জমি, প্লট, বাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। মামলায় কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল ও তাঁর স্ত্রীকে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশ পেয়ে আবজাল ও তাঁর স্ত্রী দুদকের কাছে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো বেতন পান। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত বছরের ১০ জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক । রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বছরের ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে । ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তাঁর। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন।