Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালকসহ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা হোসেনের দুর্নীতির উৎস খুঁজতে আরও চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল।

তাঁরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল আলম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল হক এবং অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম।

দুদকের কাছে তথ্য আছে, রুবিনার মালিকানাধীন রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করতেন এই দম্পতি। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় ও সরবরাহের নামে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে বিষয়টির অনুসন্ধানের হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আবদুর রশীদসহ ১৫ জনকে তলব করা হয়। তাঁদের মধ্যে আজ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মায়েনু, মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেন, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল মাজেদ ও হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল বরকত মোহাম্মদ আদনানকে।

আগামীকাল বুধবার আরও চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁরা হলেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সুবাস চন্দ্র সাহা, প্যাথলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান, স্টোরকিপার আবু জায়েদ ও হিসাবরক্ষক হুররমা আক্তার খুকী।

জানা গেছে, রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। আবজালের সঙ্গে বিয়ের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তাঁরা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

রুবিনার স্বামী আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল বেতন পান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে এ বছরের ৬ জানুয়ারি আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দেয়ে দুদক। ১০ জানুয়ারি আবজালকে দুদকে ডেকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধান দল। ২১ জানুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক, অর্থাৎ, হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ এবং ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন জব্দ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।

তবে খবর পাওয়া গেছে, আবজাল দম্পতি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। গত ১৩ মার্চ দুদকের উপপরিচালক ও আবজালের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে আবজাল ও তাঁর স্ত্রীর পাসপোর্ট নম্বর, এনআইডি নম্বর দিয়ে তাঁদের বিদেশ যাওয়া-আসার তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে ৬ জানুয়ারি দেওয়া চিঠির সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, ওই চিঠিতে এই দম্পতির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু জনশ্রুতি রয়েছে, তাঁরা দেশ ছেড়ে গেছেন। এ বিষয়ে দ্রুত দুদককে তথ্য জানানোর অনুরোধ জানানো হয়।