Thank you for trying Sticky AMP!!

সড়কবাতি নেই, সন্ধ্যার পর অন্ধকার

নারায়ণগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকাতেই সড়কবাতি নেই। সন্ধ্যার পর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে পরিবেশ। ছবিটি সম্প্রতি নিতাইগঞ্জের ডালপট্টি থেকে তোলা l ছবি: হাসান রাজা

সন্ধ্যার পর নারায়ণগঞ্জ শহর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পাড়া-মহল্লাগুলো তো বটেই, এমনকি অনেক বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান সড়কেও বাতি জ্বলে না। সড়কের পাশের দোকানের আলোয় লোকজন পথ চলেন। যেখানে দোকানের আলো নেই, সেখানে বিরাজ করে ভুতুড়ে পরিবেশ। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে আবাসিক এলাকাগুলোতে চোর-ছিনতাইকারীরা প্রায়ই লোকজনের ওপর চড়াও হয়।
গত সপ্তাহে সন্ধ্যার পর নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেল, হাতে গোনা দু-একটি এলাকা ছাড়া অধিকাংশ এলাকার সড়কেই বাতি নেই। যে মহল্লায় সড়কবাতি আছে, সেখানেও তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক দূর পরপর দু-একটি খুঁটিতে বাতি জ্বলছে, তারপর আবার অন্ধকার। শহরের প্রাণকেন্দ্রের অনেক বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতেও সড়কবাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।
শহরের কালীর বাজার বেশ ব্যস্ত এলাকা। পুরোনো কোর্ট এলাকার সামনে থেকে কালীর বাজার হয়ে ১ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত পুরো সড়কেই কোনো বাতি নেই। একই অবস্থা দেখা গেছে দিগুবাবুর বাজার এলাকায়। সিরাজদ্দৌলা রোডেও কোনো সড়কবাতি জ্বলছে না। টানবাজার খুবই ব্যস্ত এলাকা। এখানে রয়েছে সুতা, রাসায়নিক দ্রব্য ও অলংকারের বিশাল পাইকারি বাজার। এই বাণিজ্যিক এলাকার সড়কেও বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।
শহরের এসব বাণিজ্যিক এলাকার সড়কগুলো বেশ প্রশস্ত। হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহনের ভিড়ে ঠাসা থাকে সব সময়। পথের উভয় পাশে বড় বড় দোকান আর ফুটপাতজুড়ে হরেক রকম পণ্যের পসরা। পথ ও আশপাশের অন্ধকার কিছুটা দূর হয়েছে এসব দোকানপাটের সাইনবোর্ড ও ভেতরে জ্বালানো বাতির আলো যতটুকু বাইরে এসেছে তাতে, আর ফুটপাতের পসরায় জ্বালানো বাতিতে। ফলে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকাতেও আলো-আঁধারির পরিবেশ।
গত ৩০ অক্টোবর রাত সাতটার দিকে নিতাইগঞ্জে গিয়ে দেখা গেল, বাজারের ভেতরটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। কেবল মণ্ডলপাড়া সেতু থেকে সিটি করপোরেশন ভবনের সামনের প্রধান সড়কে কিছু এলইডি বাতি জ্বলছে।
নিতাইগঞ্জ নারায়ণগঞ্জের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মহাজনী কারবারের এলাকা। শহরের দক্ষিণ প্রান্তের এই বাণিজ্যিক এলাকায় রয়েছে কয়েক শ আটা-ময়দা, ডালের কারখানা ও শত শত মহাজনের গদিঘর। বাজারের ভেতরে কারখানা ও গদিঘরের ভেতর দিয়ে বেশ চওড়া সড়ক। এসব সড়ক ততটাই আলোকিত, যতটা আলো এসেছে গদিঘরগুলোর ভেতরের বাতি থেকে। সেই আলো-আঁধারিতেই চলছে ট্রাকে মালামাল তোলা-নামানোর কাজ। নিতাইগঞ্জে সম্প্রতি দিনের বেলা ট্রাক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই এখানে শত শত ট্রাকে মালামাল তোলা-নামানোর কাজ চলে।
ডালপট্টি এলাকার জয়কালী ভান্ডারের মহাজন অজিত সাহা বললেন, সড়কে বাতি না থাকায় মালামাল তোলা-নামানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরাও নিরাপত্তার শঙ্কায় ভুগছেন।
চাষাঢ়া মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের মণ্ডলপাড়া সেতু পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে খ্যাতনামা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র ও সুপার মার্কেট। এই সড়কে অল্প কিছু সড়কবাতি আছে। অধিকাংশ এলাকা দোকানের আলোয় আলোকিত। একই অবস্থা শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়কে। এটিও নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি প্রধান সড়ক। এই সড়কেও দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকটি বাতি জ্বলছে।
পাড়া-মহল্লাগুলোতে ঢুকে জিমখানা রোড, জিমখানা বস্তি, মোবারক শাহ রোড, শাহ সুজা রোডে কোনো বাতি দেখা যায়নি। পাইকপাড়ার গলির মুখে একটি খুঁটিতে একটি বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। কয়েকটি বাতি দেখা গেছে মিউচুয়াল ক্লাবের সামনের সড়কে। বাবুরাইল এলাকার প্রায় অন্ধকার সড়কে দেখা হলো স্থানীয় বাসিন্দা তোফাজ্জাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বললেন, অনেক দিন থেকে এই মহল্লায় সড়কবাতি নেই। এদিকে মাদকাসক্তদের উৎপাত আছে। সন্ধ্যার পর চলাচল করা নারীদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চাষাঢ়া মোড় থেকে পঞ্চবটি সড়ক এবং পাইকপাড়া এলাকায় কোনো সড়কবাতি দেখা যায়নি। পাইকপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার পর দোকানপাটে আলো থাকে বলে চলাচলে তেমন সমস্যা হয় না। তবে সমস্যা হয় ফজরের নামাজের সময়। তখন পুরো মহল্লা অন্ধকারে ডুবে থাকে। সড়কের পাশে অনেক সময় ময়লার স্তূপ থাকে। অনেকে অন্ধকারে ময়লার মধ্যে পড়ে যান। সে কারণে টর্চ হাতে নিয়ে বের হতে হয়। ছিনতাইকারীরাও অন্ধকারের সুযোগ নেয়। সপ্তাহ দু-এক আগেই মহল্লার একজন একটু রাতে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন বলে তিনি জানালেন।
সড়কবাতি দেখা যায়নি মাসদাইর, নামাপাড়া, আদর্শ স্কুলের পাশে, দিঘিপাড়, জল্লারপাড়—এসব এলাকাতেও। মহল্লার ভেতরের এসব শাখা সড়কে স্বাভাবিকভাবেই প্রধান সড়কের তুলনায় দোকানপাট কম। দোকানগুলোও বেশ দূরে দূরে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই মহল্লাগুলোতে বেশ গা-ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জল্লারপাড়ের দেলোয়ার হোসেন বললেন, হঠাৎ কখনো কখনো বাতি লাগানো হয়। কিন্তু নষ্ট হয়ে গেলে আর কোনো খবর থাকে না। মাসের পর মাস চলে যায়।
শহরে সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর নারায়ণগঞ্জ যে প্রায় ভুতুড়ে শহরে পরিণত হচ্ছে, এ বিষয়ে জানাতে চাইলে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বললেন, যেখানে বাতি লাগানো প্রয়োজন সেখানে বাতি লাগানো হয়েছে। নিয়মিতই সড়কবাতি লাগানো হয়ে থাকে। তবে বর্ষার কারণে বাতিগুলো ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যায়। বেশি দিন টেকে না। এখন যেসব এলাকায় বাতি নেই সেখানে আবার নতুন করে সড়কবাতি লাগানো হবে।
মেয়র বলেন, একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আগামী চার-পাঁচ মাসের ভেতরে সব এলাকায় সড়কবাতি লাগানো হবে।