সড়ক বেহাল, নৌপথে সচল যোগাযোগ
‘আউকা, আউকা। রাস্তা খারাপ, গাড়ি চলে না, নাওয়ে ভালা...!’। ৬ জুলাই ভরদুপুরে এ রকম হাঁকডাকে সরব ছিল সিলেট সদর উপজেলার উমারগাঁও এলাকা। পাকা রাস্তা গিয়ে নদীতীরে থেমেছে। সেখান থেকে লোকজন একে একে নৌকায় উঠছেন। গন্তব্য সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত ছিল দুটি পথ। একটি নৌপথ, অন্যটি রজ্জুপথ (রোপওয়ে)। এ দুই পথের পাশাপাশি ১৯৮৮ সালে ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক স্থাপিত হলে শুরু হয় সড়কপথ। এটি একটি জাতীয় সড়ক। কিন্তু এর অর্ধেকের বেশি অংশ যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। ছয় মাস ধরে এ সড়কে সরাসরি ট্রাক চলাচল বন্ধ। সড়কের এ দুরবস্থার কারণে প্রায় এক দশক ধরে বর্ষাকালে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ নৌপথ সচল রয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, সড়কপথে থেমে থেমে গাড়ি চলতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। নৌকায় এক থেকে দেড় ঘণ্টায় সিলেট থেকে কোম্পানীগঞ্জে আসা যায়। এ জন্য বর্ষার এই সময়ে নৌপথে অনেককে নিরাপদে যাতায়াত করতে দেখা যায়। প্রশাসনিক কিছু কাজও নৌপথে করা যাচ্ছে। এ পথে চলাচলে নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশকে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার উমারগাঁও থেকে কোম্পানীগঞ্জ সদর পর্যন্ত চলছে যাত্রীবাহী নৌকা। নৌকাঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে যাতায়াত শুরু হয়েছে। মৌসুম বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত। প্রতিদিন এই ঘাট থেকে ২০-২৫টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ঘাট থেকে নৌকা চলাচল করে। রাতে সাধারণত আবহাওয়া ও ডাকাতির ভয়ে যাতায়াত করেন না কেউ।
নৌকাচালক ফয়জুর রহমান বলেন, নৌপথে রোগীসহ বয়স্ক নারীরাও যাতায়াত করেন। সড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ায় এই পথ দিয়েই যাওয়া-আসা করেন তাঁরা।
নৌকাযাত্রী কোম্পানীগঞ্জের মো. কবির হোসেন মা ও স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটে এসেছিলেন। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন মুরগির খাদ্য। সড়কপথে যেতে হলে সময় বেশি লাগে। ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতেই তিনি এ পথে যাচ্ছেন বলে জানালেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক একটি জাতীয় সড়ক। ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের মধ্যে কাকিয়ারপাড়, ধোপাগুল, লালবাগ, ছালিয়া, পাগলামুড়া, সালুটিকর, বর্ণি, তেলিখাল, লাছুখাল, টুকেরবাজার, তৈমুরনগর, পারুয়াবাজার, থানাবাজার ও ভোলাগঞ্জের ১৪ কিলোমিটার অংশ দিয়ে যানবাহন চলে না। এর মধ্যে কেবল ধোপাগুল, ছালিয়া ও সালুটিকর এলাকার কিছু অংশে পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের এসব স্থানে চলাচল করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
২০১৪ সালের মে মাসে মহাসড়কটি পরিদর্শন শেষে এটিকে ‘ক্যানসার আক্রান্ত সড়ক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই সময় তিনি সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী ওই চলতি বছরই ৪১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ মহাসড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রায় তিন বছর ধরে ওই প্রকল্পের কাজ চলছে।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর সড়কের ১৫ শতাংশ কাজ হওয়ার কথা। এ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। সড়কের বাকি অংশের নির্মাণকাজ দুই বছরে পর্যায়ক্রমে শেষ করা হবে।
কোম্পানীগঞ্জ সদরের বাসিন্দা পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বেহাল সড়কের কারণে প্রায় তিন বছর ধরে প্রতি বর্ষায় নৌকা চলত। এবার বন্যার পানি দীর্ঘ হওয়ায় মনে হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জবাসী সেই নাওয়ের যুগে ফিরেছে আবার!’
আরও পড়ুন
-
চীন–রাশিয়ার ‘গোপন লেনদেন’ বাড়ছে, ব্যবহার হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সিও
-
অতি ডান-বাম নয়, দেশের মানুষ সরকারকে উৎখাত করতে চায়: মির্জা ফখরুল
-
বিলাসিতা ছেড়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিতে শিল্পমালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
-
বিদেশি চাপ বাড়লেও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন-চর্চায় প্রতিবন্ধকতা কাটছে না কেন
-
ভেঙে গেল ১২৭ বছরের পুরোনো গোদরেজ গ্রুপ, কে কী পাচ্ছেন