Thank you for trying Sticky AMP!!

হাতি ঠেকাতে বৈদ্যুতিক বেড়া

‘সাবধান’ এটা হাতি চলাচলের পথ। শেরপুরের সীমান্ত সড়ক দিয়ে যেতে কিছুক্ষণ পরপর গাছের সঙ্গে এ রকম সতর্কবাণীর সাইনবোর্ড দেখে গা ছমছম করে। এই বুঝি নেমে এল হাতি! হাতির উপদ্রব উদ্বেগজনকভাবে বাড়ায় বন বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে।

হাতির আক্রমণে শেরপুর জেলায় এ পর্যন্ত ৫২ জন নিহত হয়েছে। বিস্তীর্ণ জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা আক্রমণে হাতি মারা পড়েছে ২০টি। এ অবস্থায় বন বিভাগ হাতি-মানুষের সহ-অবস্থানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্য হাতির প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী টিলা-পাহাড়ে লেবু ও বেতগাছের বাগান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্তে পরীক্ষামূলকভাবে বৈদ্যুতিক (সৌর বিদ্যুৎ) তার দিয়ে বেড়া নির্মাণ শুরু করেছে। এ ছাড়া শতাধিক একর জমিতে হাতির খাবারের উপযোগী গাছ লাগানো হয়েছে।

শুধু শেরপুর নয়, ভারতের মেঘালয় থেকে আসা হাতি কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গহিন বনে বিচরণ করছে এবং মাঝেমধ্যেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

শেরপুর জেলা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় ও পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, ১৯৯৫ সালে ২০-২৫টি বন্য হাতির দল ভারতের আসাম থেকে দলছুট হয়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে ঢুকে পড়ে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় হাতিগুলো আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। হাতির সংখ্যা এখন এক শ ছাড়িয়েছে। ধান ও কাঁঠাল পাকার সময় লোকালয়ে হাতির উপদ্রব বাড়ে। শুধু শেরপুরে এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরই মারা গেছে ১২ জন। আহত হয়েছে ৫ শতাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলসহ সম্পদ নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার ওপর। অন্যদিকে হাতি মারা গেছে ২০টি।

এ ছাড়া জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় হাতির আক্রমণে গত পাঁচ বছরে চারজন নিহত হয়েছে। এ সময়ে তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়। গত বছরের ১৭ অক্টোবর গ্রামবাসীর পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদে জড়িয়ে দুটি বুনো হাতি মারা যায়।

হাতির প্রবেশ ঠেকানোর উদ্যোগ

১০-১৫ বছর আগে এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়াতেন। কিন্তু এখন এসবে কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থায় সীমান্ত এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে বেড়া (বায়োলোজিক্যাল ফেন্সিং) দেওয়ার প্রকল্প নেয় বন বিভাগ। এর মধ্যে শেরপুরের প্রায় ১৮ কিলোমিটার হাতির বিচরণক্ষেত্র এবং হাতির আক্রমণের সম্ভাব্য গতিপথে বেড়া নির্মাণ চলছে। তবে ঝিনাইগাতীর গজনী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সৌরবিদ্যুতের এই বেড়ার ফাঁক গলে হাতি ঢুকে পড়ছে। এর চেয়ে এলাকায় বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। কারণ হাতি রাতে আলো থেকে দূরে থাকে।

সম্প্রতি নালিতাবাড়ীর তারানি এলাকায় টিলার ওপর কয়েকটি পরিত্যক্ত ঘর দেখা যায়। এর মধ্যে আধা পাকা একটি ঘরের দেয়ালে বড় ফাটল দেখা যায়। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন (৪০) বলেন, এখানে চার-পাঁচটি গারো পরিবার থাকত। হাতির আক্রমণের মুখে চার-পাঁচ বছর আগে তারা এলাকা ছেড়েছে।

নজরুল ইসলাম পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। হাতির তাণ্ডবের মুখে তিনি পাহাড়ি এলাকায় নিজের ভিটা ছেড়ে দাউদারা গ্রামে অন্যের জমিতে অস্থায়ী নিবাস গড়েছেন। নজরুল গত বছরের ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, পাশের এলাকার লোকজন মানবিক কারণে তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে। তাঁর মতো অনেকে হাতির ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলার চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাতির উপদ্রব থেকে রক্ষায় পাহাড়ি জনপদে বিদ্যুতায়নসহ বন বিভাগের প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় প্রায় তিন হাজার পরিবারকে এলাকা ছেড়ে যেতে হতে পারে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) গোবিন্দ রায় বলেন, ‘হাতি বন নিয়ন্ত্রণ করে। এরা প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রক্ষা করে। তাই হাতি ও মানুষের সহ-অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, এসব হাতির বসতি মেঘালয়ে। তাই এ প্রাণী রক্ষায় দুদেশেরই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশের বন অধিদপ্তরের যৌথ সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক এ এম পারভেজ রহিম সম্প্রতি বলেন, হাতির অবাধ চলাচলের স্বার্থে কাঁটাতারের বেড়ায় স্থাপিত করিডোর সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে তিনি মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার ডিসির সঙ্গে কথা বলেছেন। বর্তমানে করিডোরগুলো খোলা আছে। তবে কোনোভাবেই বনভূমিতে জনবসতি গড়া যাবে না বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাংসদ এ কে এম ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হাতির আক্রমণে হতাহতের পরিবারকে অনুদান ও ক্ষতিপূরণের অর্থ বাড়াতে গত অক্টোবর মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। তাতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা, আহত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা এবং ফসলের ক্ষতির জন্য ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন শেরপুরের দেবাশীষ সাহা রায়, নালিতাবাড়ীর আব্দুল মান্নান ও জামালপুরের আব্দুল আজিজ)