Thank you for trying Sticky AMP!!

হাত-পা বানিয়ে দিয়ে তাঁরাও খুশি

‘২৩ বছর বয়সে নিজের পায়ে প্রথম দাঁড়ান, প্রথম জুতা পায়ে দেন। তাঁর মুখে যে খুশি ছিল, তা–ই আমাদের অর্জন’—কথাগুলো বললেন নূর জাহান আক্তার। তিনি সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহায়তায় পরিচালিত প্রস্থেটিকস অ্যান্ড অর্থোটিকস বিভাগে কর্মরত।

আইসিআরসির ফিজিওথেরাপিস্ট নূর জাহান আক্তার জানালেন, ওই রোগীর জন্মগতভাবেই হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা ছিল না। হাঁটুতে ভর দিয়ে সিআরপিতে আসতেন। তারপর তাঁর জন্য বানানো কৃত্রিম পা দিয়ে যেদিন নিজে দাঁড়াতে এবং একা হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারলেন, তাঁর খুশি দেখে এখানে কর্মরত অন্যদের চোখেও পানি চলে এসেছিল।

প্রস্থেটিকস অ্যান্ড অর্থোটিকস বিভাগে কর্মরতদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলে দেখা গেল, এখানে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের সবার মুখেই তৃপ্তির হাসি। একজন কর্মী মেশিনে পায়ের মাপ ঠিক করতে করতেই বললেন, ‘দিনে দুই থেকে তিনটা পা বানাই।’ এই কর্মী ১১ বছর ধরে এ বিভাগটিতে কাজ করছেন।

সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে প্রস্থেটিকস অ্যান্ড অর্থোটিকস বিভাগ। যাদের জন্মগতভাবে হাত-পা নেই বা কোনো দুর্ঘটনায় কাটা গেছে, তাদের জন্য এই বিভাগে কৃত্রিম হাত-পা বানানো হয়। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন।

যাদের জন্মগতভাবে হাত-পা নেই বা কোনো দুর্ঘটনায় কাটা গেছে, তাদের জন্য এই বিভাগে কৃত্রিম হাত-পা বানানো হয়। আর যাদের হাত-পা আছে কিন্তু কোনো জটিলতায় তা কাজ করছে না, তাদের জন্য বিভিন্ন ‘ডিভাইস’ তৈরি করা হয়, যার সাহায্যে হাত-পা ব্যবহার করেই দৈনন্দিন কাজ চালানো যায়। এখানে কর্মরত ব্যক্তিরা কৃত্রিম পায়ের জন্য জুতাও তৈরি করছেন।

এ বিভাগের অর্থোপেডিক শু টেকনোলজিস্ট আজিজুর রহমান ১৯৯৭ সালে কিশোর বয়সে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই পা হারান। হাঁটুর নিচ থেকে তাঁর দুই পা কেটে ফেলতে হয়। আজিজুর বেশ গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘এখন আমি আমার পা আর জুতা নিজেই বানাই। নিজের বানানো পা ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করি যে, এতে আর কী কী করলে আমার মতো অন্য একজন ব্যক্তি তা ব্যবহারে আরও একটু আরাম পাবেন।

’আইসিআরসির ফিজিওথেরাপিস্ট নূর জাহান আক্তার বললেন, কৃত্রিম হাত-পা বা অন্যান্য ডিভাইসগুলো অনেক ব্যয়বহুল। আর এ ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হওয়া মানুষগুলো বেশির ভাগই দরিদ্র। অনেকে জানেনও না যে, দেশেই এসব সেবা পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় ডিভাইস সরবরাহ, রোগীর খাবার, থাকা, যাতায়াত ভাড়াসহ নানা সহায়তা দিচ্ছে আইসিআরসি।

যাদের হাত-পা আছে কিন্তু কোনো জটিলতায় তা কাজ করছে না, তাদের জন্য বিভিন্ন ডিভাইসও তৈরি হয় এখানে। এসব ডিভাইসের সাহায্যে হাত-পা ব্যবহার করেই দৈনন্দিন কাজ চালানো যায়। এখানে কর্মরতরা কৃত্রিম পায়ের জন্য জুতাও তৈরি করছেন। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন।

নূর জাহান আক্তার বললেন, রোগীর বয়স, কাটা বা অসুস্থতার ধরনসহ একেক রোগীকে দীর্ঘদিন সিআরপিতে থাকতে হয়। কার জন্য কেমন হাত বা পা লাগবে, তার মাপজোখ নেওয়া, ওয়ার্কশপে বানানোসহ নানা প্রক্রিয়ার কাজ চলে এখানে। রোগীর হাত বা পা লাগিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না, পরে কাউন্সেলিং এবং ফলোআপ চলতে থাকে। নূর জাহান আক্তারের দাবি, অন্যান্য জায়গার তুলনায় রোগীরা কম মূল্যে এখান থেকে সেবা পাচ্ছেন। এ ছাড়া সিআরপির সমাজসেবা বিভাগে আবেদন করে দরিদ্র রোগীরা কম মূল্যে ডিভাইসগুলো পাচ্ছেন। ফলে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সিআরপির প্রস্থেটিকস অ্যান্ড অর্থোটিকস বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। কেউ মনোযোগ দিয়ে হাত বানাচ্ছেন তো কেউ পা বানাচ্ছেন। জুতা বা অন্যান্য সরঞ্জামও বানাচ্ছেন কেউ কেউ। একেক বিভাগে একেক কাজ হচ্ছে। কৃত্রিম হাত-পা ওভেনে দেওয়া, সেখান থেকে বের করাসহ ব্যস্ততার শেষ নেই। বর্তমানে সিআরপিতেই স্কুল অব প্রস্থেটিকস অ্যান্ড অর্থোটিকস থেকে ডিপ্লোমা করার সুযোগ পাচ্ছেন প্রশিক্ষণার্থীরা। ডিপ্লোমার পাশাপাশি স্নাতক কোর্স চালুর চিন্তাভাবনা চলছে বলেও জানা গেল।