Thank you for trying Sticky AMP!!

হেলালের নামে ১০১ মামলা, তাজের কোনো মামলা নেই

আজিজুল বারী হেলাল ও শরীফ শাহ কামাল তাজ

খুলনা-৪ আসন (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) থেকে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এবং কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ। গত রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষে দুজনের মনোনয়নই বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এই দুই প্রার্থীর মধ্যে তাজ বেশ বিত্তশালী। ১০ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তাঁর আয় ও সম্পদ আগের চেয়ে বেড়েছে। ১০ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। অন্যদিকে ওই সময়ের মধ্যে হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১০১টি।

নবম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দুই প্রার্থীর দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে শরীফ শাহ কামাল তাজ বিএনপির প্রার্থী হয়ে হেরে যান। অন্যদিকে আজিজুল বারী হেলালও ঢাকা-১৮ থেকে নির্বাচন করে হেরে যান। হেলাল প্রথমবারের মতো খুলনার কোনো আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আজিজুল বারী হেলাল মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতক উত্তীর্ণ। হলফনামায় পেশা হিসেবে তিনি ঠিকাদারি, সরবরাহকারী ও আমদানি ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া কৃষি খাত থেকে বছরে ১২ হাজার টাকা পান। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুয়ায়ী সে সময় তাঁর আয় ছিল প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে হেলালের অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি মোটরগাড়ি আছে তাঁর। স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে আড়াই বিঘা কৃষি জমি।

২০০৮ সালের হলফনামা অনুয়ায়ী সে সময় হেলালের ব্যাংকে ছিল ২ লাখ টাকা, নগদ ছিল ১৮ হাজার টাকা, স্বর্ণ ছিল ২৫ ভরি। ২০০৮ সালের মতো এ বছরও হেলাল তাঁর স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদের হিসাব দেখাননি।

হেলালের বিরুদ্ধে থাকা ১০১টি মামলার মধ্যে ৫২টি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া ৯টি মামলার তদন্তকাজ চলছে, বাকি ৪০টি মামলার কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থগিত। ২০০৮ সালে কোনো চলমান মামলা ছিল না।

>তাজের সম্পদ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তাঁর সাড়ে তিন কোটি টাকার সম্পদ আছে।

মামলার বিষয়ে আজিজুল বারী হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে। ওই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কারণে মামলাগুলো করা হয়েছে। তবে সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তাঁর দাবি, যাঁরা সরকারদলীয় লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। নির্ভরশীলদের আয় না দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় নেই। এ কারণে তিনি ওই তথ্য হলফনামায় দেননি।

আরেক প্রার্থী শরীফ শাহ কামাল তাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমকম। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি মার্কেট অ্যাকসেস প্রোভাইডার্স লিমিটেড ও আইআর অ্যাকটিভেশন অ্যান্ড প্রমোশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর পাশাপাশি ক্যারট কমিউনিকেশনস, পিপল স্কেপ, মার্কেট এক্সপ্রেস ও সুগার প্রডাকশন লিমিটেডের মালিক তিনি। তিনি সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং কোম্পানির পরিচালক হিসেবে মাসিক ভাতা পান ১৫ লাখ টাকা। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৮০ হাজার টাকা।

হলফনামা অনুযায়ী, তাজের নামে কোনো মামলা নেই। ২০০৮ সালে তাজের নগদ টাকা ছিল ১৪ লাখ। কোনো বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না, ব্যাংকে ছিল ১১ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড এবং ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার এফডিআর ছিল। এ ছাড়া ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ছিল, ২৪ লাখ টাকার গাড়ি, ৬৮ লাখ টাকার গুলশানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ও ৪০ হাজার টাকার আসবাব ছিল। বর্তমানে তাজের নগদ আছে ২ কোটি ১১ লাখ টাকা, ১৬ হাজার ২১৩ ইউএস ডলার। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ২৫ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড ও ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে। আছে ৩২ লাখ টাকার গাড়ি, ২ লাখ টাকার স্বর্ণ, ২ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৭ দশমিক ১৫ একর কৃষি জমি আছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৪ লাখ টাকা।

দুটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাজের সম্পদের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তাঁর চার কোটি ৮৫ লাখ টাকার সম্পদ আছে। আগের হিসাবে তাঁর সম্পদ ছিল ১ কোটি টাকার কিছু বেশি। তাঁর স্ত্রীর নগদ টাকা ও প্রাইজবন্ডের টাকা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তাজের স্ত্রীর সাড়ে ৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ, ব্যাংকে ৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ও ২০ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড আছে। সব মিলিয়ে ৩২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে তাঁর স্ত্রীর। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুয়ায়ী তাজের স্ত্রীর মাত্র নগদ ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ছিল।

ইস্টার্ণ ব্যাংক থেকে তাজের ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া আছে। ২০০৮ সালে তাঁর ঋণ ছিল প্রায় ৭২ লাখ টাকার।

কোনো মামলা না থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাজ বলেন, ‘কেন মামলা হয়নি, তা বলতে পারব না। বহুবার মামলা করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমি এলাকায় না থাকায় ওই মামলা আর শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করা হয়েছে।’