১৫ দিনে দুই হাজার ৩২ জন রোগী ভর্তি
ভ্যাপসা গরমে এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এ রোগ এড়াতে পচা–বাসি ও খোলা খাবার এবং দূষিত পানি বর্জন করতে হবে বলে পরামর্শ চিকিৎসকদের।
চাঁদপুর ও এর আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলায় ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত ৩১ মার্চ থেকে ১৫ দিনে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) মতলব হাসপাতালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু বেশি।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৯০ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়। ভ্যাপসা গরমে এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ রোগ এড়াতে পচা–বাসি ও খোলা খাবার এবং দূষিত পানি বর্জন করতে হবে বলে পরামর্শ তাঁদের।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থেকে হাসপাতালটিতে আসা মাসুদ রানা বলেন, ‘পাতলা পায়খানা ও বমি অওয়ায় শনিবার দুপুর ১২টায় এখানে ভর্তি অইছি। চিকিৎসকেরা খাবার স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াইছে। এখন কিছুডা বালার দিকে।’
মতলব হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৩১ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২ হাজার ৩২ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৩৬ জন। এ সংখ্যা বছরের অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। অন্য সময়ে এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়। ২০১৭ সালে একই সময়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০৫ জন এবং গত বছর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৯ জন ভর্তি হয়।
ওই সূত্রে আরও জানা যায়, ওই ১৫ দিনে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে নবজাতক থেকে চার বছর বয়সী শিশু ৯৭৯টি এবং ১৫ বছরের বেশি বয়সী ৯৬৬ জন। বাকি ৮৭ জন পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী। রোগীদের মধ্যে চাঁদপুর সদরের ২৮৯, ফরিদগঞ্জের ১৪৭, হাইমচরের ৩৪, হাজীগঞ্জের ১৩৫, কচুয়ার ১০০, মতলব উত্তরের ১২৯, মতলব দক্ষিণের ১৩৬ ও শাহরাস্তির ৪৫ জন। এ ছাড়া কুমিল্লা সদরের ৮৯, দাউদকান্দির ৮৮, দেবীদ্বারের ৬৭, লাকসামের ৫৪, মুরাদনগরের ৪০, নাঙ্গলকোটের ৩৬, তিতাসের ৩২ এবং বরুড়া ও চান্দিনার ৮৯ জন করে রোগী রয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদরের ১১৭, রায়পুরের ৮৬ ও রামগঞ্জের ৬৫ জন রোগীও রয়েছে। বাকি রোগীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার।
গত সোমবার দুপুরে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নিচ্ছে অনেক রোগী। রোগীদের চিকিৎসা ও সেবায় ব্যস্ত চিকিৎসক ও নার্সরা।
কুমিল্লার লাকসামের উত্তর-পশ্চিমগাঁও গ্রাম থেকে আসা মহরম আলী বলেন, ‘ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি অওনে গত শনিবার বিকালে এনো আইছি। হেরা খাওনের স্যালাইন ও কিছু ওষুধ দিছে। পাতলা পায়খানা ও বমি একটু কমছে।’
জানতে চাইলে হাসপাতালটির চিকিৎসা কর্মকর্তা এনামুল ইসলাম বলেন, ভ্যাপসা গরমের কারণে এত বেশি হারে লোকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ময়লাযুক্ত ও খোলা খাবার খাওয়া এবং দূষিত পানি পান করায় এ রোগের বিস্তার ঘটেছে। শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুদের স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। সাত মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের খাওয়ার স্যালাইন, বেবি-জিংক, মায়ের বুকের দুধ, সুজি ও খিচুড়ি খেতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য রোগীকে খাবার স্যালাইন, স্বাভাবিক খাবার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। বারবার পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে, ঘন ঘন বমি হলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে ও গায়ে জ্বর থাকলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
চিকিৎসা কর্মকর্তা এনামুল ইসলাম আরও বলেন, এ হাসপাতালে শয্যা ৭০টি। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ জনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও ওষুধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।
আরও পড়ুন
-
সকাল ৯টার ট্রেন ছাড়েনি বেলা ২টায়ও, স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়েছেন ক্লান্ত মা-মেয়ে
-
বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে সাংবাদিকদের বাধা ব্যাংক লোপাটকারীদেরই উৎসাহিত করবে: নোয়াব সভাপতি
-
পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
-
মোদির বিভাজনের রাজনীতির পেছনের কারিগর, যেভাবে উত্থান অমিত শাহর
-
ঝড়বৃষ্টি হতে পারে ৬ দিন ধরে, বলছে আবহাওয়া অফিস