Thank you for trying Sticky AMP!!

২০ মাস হাসপাতালে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ!

তোফায়েল আহমেদ জোসেফ

শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ টানা ২০ মাস ধরে হাসপাতালে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই আসামির কোনো জটিল রোগের কথা জানা যায়নি। কাগজপত্রে লেখা, ‘পিঠে ব্যথা’।

এই ‘ভিআইপি রোগী’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) কারাকক্ষে আছেন আরাম-আয়েশে। যাঁকে খুশি কারাকক্ষে ডেকে নিচ্ছেন, দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন। ১৯৯৯ সালের একটি হত্যাকাণ্ডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এখনো সাজা ভোগ করা বাকি আছে ২০ বছর ৯ মাস। সম্ভাব্য মুক্তির তারিখ ২০৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি।

শীর্ষ সন্ত্রাসীর এভাবে মাসের পর মাস হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে বিব্রত চিকিৎসক ও কারা প্রশাসন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়ছে না। কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক ও কারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একই জবাব, ‘সবই তো বোঝেন।’

জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) আবদুল্লাহ্-আল-হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড না বললে তো আমি কিছু করতে পারি না। এ প্রশ্ন আমার নিজেরও, বিষয়টি অস্বাভাবিক।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কারাকক্ষের দোতলার একটি কক্ষে আছেন জোসেফ। গত রোববার ও গতকাল মঙ্গলবার সেখানে গেলে এক কারারক্ষী বেশ উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসেন। জানতে চান, কোনো ভিজিটিং কার্ড আছে কি না। কারারক্ষী বলেন, একটা কাগজে আপনার নাম লিখে দেন, আর প্রিজন সেল ভবন থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ান। ওপর থেকে স্যার আপনাকে দেখবেন। তিনি চিনতে পারলে ওপরে ওঠার অনুমতি দেবেন।

কারারক্ষীর কথামতো একটু দূরে দাঁড়াতেই কারাকক্ষের দোতলা থেকে আরও এক কারারক্ষী জানতে চান, ‘জোসেফ স্যারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন?’ হ্যাঁ সূচক জবাব শুনে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন। এরই মধ্যে দোতলায় গ্রিলের ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে দেখে দ্রুত ভেতরে চলে যেতে দেখা যায় জোসেফকে। এরপর কারারক্ষী ফিরে এসে বলেন, ‘স্যার আপনাকে চিনতে পারেননি, দেখা করবেন না।’

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিঠে ব্যথার কারণে জোসেফকে বিএসএমএমইউর কারাকক্ষে (প্রিজন সেল) আনা হয়। তারপর থেকে তিনি হাসপাতালেই আছেন। জোসেফের চিকিৎসা করছেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আবু নাসার রিজভী। রোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাক পেইন। ব্যথা আছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছে। ভালো না হলে অপারেশন লাগতে পারে।’

গত জুনে এই প্রতিবেদক যখন জেসেফের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এই চিকিৎসকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, একই কথা বলেছিলেন তিনি। এক বছরেও তাঁর কেন কোনো অপারেশন হলো না জানতে চাইলে বলেন, ‘করব, শিগগিরই হবে।’

সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে এভাবে হাসপাতালে রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে। তারা যতক্ষণ না বলবে, আমরা তো কারাগারে ফিরিয়ে আনতে পারি না। এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা করবে না কেবিনে রেখে করবে, এটাও তাদের বিষয়।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কারাগার ও হাসপাতালের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা প্রথম আলোর সঙ্গে জোসেফের এভাবে হাসপাতালে থাকার বিষয়ে সমালোচনা করেছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীরা বলেছেন, কারা হাসপাতাল থাকলেও বন্দীরা বাইরের হাসপাতালে সুযোগ-সুবিধা পান বেশি। তাই সাজাপ্রাপ্ত বিত্তবান বা ক্ষমতাবানেরা আরাম-আয়েশে থাকতে এসব হাসপাতালে আসেন।

কারা সূত্র জানায়, গত বছরের জুন মাসে জোসেফের মা রেনুজা বেগম তাঁর সন্তানের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেই সাজা মওকুফের পক্ষে মতামত দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও ইতিবাচক মতামত পাঠানো হয়। কিন্তু এক বছরেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আর কোনো জবাব আসেনি। শোনা যাচ্ছে, সাজা মওকুফের জন্য স্বজনেরা আবারও দৌড়ঝাঁপ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন জোসেফ। বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে নামেন। পরে জোসেফ যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপে। রাজধানীতে তখন ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপ ও ‘ফাইভ স্টার’ গ্রুপ দাপিয়ে বেড়াত। এভাবেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম ওঠে জোসেফের।

১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন জোসেফ। ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল জোসেফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন জোসেফ। ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়ে তাঁর সাজা বহাল থাকে। এ ছাড়া অস্ত্র মামলায় তাঁর ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়।

২০০৪ সালে তৎকালীন সরকার জোসেফসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। এর এক বছর পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জোসেফকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে।