Thank you for trying Sticky AMP!!

২৫ দিন ধরে বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বাগেরহাটের রামপালে নিজেদের বাড়িতে যাবেন মুক্তার হোসেন। হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ভাড়া করেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতাল থেকে রামপালে যেতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু ভাড়ায়চালিত অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয় প্রায় দ্বিগুণ ২ হাজার ২০০ টাকায়।

এটি গত মঙ্গলবারের ঘটনা।এভাবে বেশি ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করায় বিরক্ত মুক্তার হোসেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবাকে হাসপাতাল ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু এখনো অসুস্থ থাকায় অন্য কোনো গাড়িতে নেওয়ার ঝুঁকি নেননি। তাই ভাড়া বেশি হলেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিয়েছেন।

তেল সরবরাহ না থাকায় এই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রয়েছে ২৫ দিন ধরে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই মানুষের। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে রোগীদের অন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে স্বজনদের।

খুলনা নগরের নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থিত এলেনা পেট্রলপাম্প। এই পাম্প থেকে জ্বালানি তেল নেয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালের কাছে পাম্পটির বকেয়া পড়েছে ১৭ লাখ টাকারও বেশি। তাই পাম্প কর্তৃপক্ষ ১ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে সব ধরনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ কারণে হাসপাতালের তিনটি গাড়ি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দুটিই অ্যাম্বুলেন্স। অক্সিজেন সরবরাহে ব্যবহৃত একমাত্র পিকআপটিও এত দিন বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন সেটি অল্প অল্প তেল নিয়ে চলছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় দুই বছর ধরে জ্বালানি বাবদ এই টাকা বকেয়া পড়েছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাসের জন্য গড়ে প্রতি মাসে তেল খরচ হয় ২ লাখ ১৫ হাজার টাকার।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জ্বালানি তেল বাবদ ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। আগের দুই বছরের বকেয়াসহ চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বকেয়া পরিশোধের জন্য পাম্প কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের মাঝামাঝিতে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে আর তেল দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করা হয়। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় হাসপাতালকে সব ধরনের জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পাম্প কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে এলেনা পেট্রলপাম্পে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আনন্দ মোহন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‌মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় পেট্রলপাম্পে বকেয়া পড়েছে। বকেয়া পরিশোধে মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, হাসপাতালের গাড়িগুলো চলতে না পারায় রোগী ও চিকিৎসকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। মালামাল আনা-নেওয়া করতে না পারায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে হাসপাতালকেও।

হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় থেকে জ্বালানি তেল খরচ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু তা চলতি অর্থবছরের। আগের বকেয়া থাকা কোনো টাকা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি। ফলে পাম্প থেকে তেল পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন। তিনি জানান, অ্যাম্বুলেন্সসহ সব গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে। তবে হাসপাতালের অক্সিজেনের সংকট মেটাতে অল্প তেল কিনে পিকআপ সচল রেখে শুধু মাল আনা-নেওয়ার কাজ চালানো হচ্ছে।