Thank you for trying Sticky AMP!!

৪৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে দিল পিএসসি

স্বাক্ষর জালিয়াতি করে এবং নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ৪৮ জন কর্মকর্তাকে প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এসব কর্মকর্তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) নানা ধরনের জালিয়াতি চিহ্নিত করে পিএসসি পদোন্নতির ফাইলটি ফেরত পাঠিয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের যে অনুবিভাগ থেকে পদোন্নতির ফাইল পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে, সেই বিভাগের কর্মকর্তাদের তদন্ত কমিটিতে রাখায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পিএসসি এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সরকারি কর্মকর্তাদের এসিআরে অতি মূল্যায়ন করে ১৯ জনের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৯ জনের এসিআরেও স্বাক্ষর ও নম্বর ঘষামাজা করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রম পরিদর্শক হিসেবে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত আছেন। পদোন্নতি পেয়ে তাঁদের সহকারী পরিদর্শক হওয়ার কথা, যা প্রথম শ্রেণির পদ।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এসিআর অতি মূল্যায়নের জন্য ১৯ জনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা করে ৫৭ লাখ এবং এসিআর ঘষামাজার জন্য ২৯ জনের কাছ থেকে দুই লাখ করে ৫৮ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়েছে।

জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। সচিব একটি কমিটি করে দিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত থাককু না কেন রেহাই পাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা তদন্ত করলেও কোনো সমস্যা হবে না। তাঁদের ওপর এই আস্থা আমাদের আছে। জড়িতদের চিহ্নিত করতে না পারলে প্রয়োজনে আবার তদন্ত হবে।’ অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা লেনদেন হয়েছে কিনা তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বলা সম্ভব না। 

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম রফিকুল ইসলাম। অপর দুই সদস্য হলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জয়নাল আবেদীন এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুহুল আমিন। জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিলগালা করে গোপনীয় প্রতিবেদনের ফাইল পিএসসিতে পাঠানো হয়। এটা কোথায়, কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে, তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদোন্নতির এই প্রস্তাব গত ২৪ জুন পিএসসিতে পাঠানো হয়। পিএসসির পরিচালক মো. আনোয়ার ইমাম ২৪ জুলাই এক চিঠিতে ৪৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির ব্যাপারে আপত্তি তুলে শ্রম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।

জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, পিএসসির কাজ হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইনকানুন অনুযায়ী পদোন্নতির সুপারিশ করা। পদোন্নতির সুপারিশ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। পিএসসির কাজ কেবল তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে দেখা এবং সুপারিশ করা। টুকটাক সমস্যা থাকলে পিএসসি সেগুলো উপেক্ষা করে, অযথা কাউকে হয়রানি করে না। কিন্তু সমস্যাগুলো জটিল ও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল বলেই কাউকে সুপারিশ করা যায়নি।

>এসিআর জালিয়াতি
অভিযুক্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়েই তদন্ত শুরু করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়
শুরুতেই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসিআরগুলো প্রস্তুত ও পিএসসিতে পাঠানোর দায়িত্বে ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপমহাপরিদর্শক বেগম জোবেদা খাতুন। এই প্রক্রিয়ায় আরও যুক্ত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপন শাখার উপসচিব দিল আফরোজা বেগম। জানতে চাইলে দিল আফরোজা প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিলগালা করেই এসিআর পাঠানো হয়েছে। ঘষামাজা থাকলে তাঁরা পাঠাতেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝামেলাটা কোথায় হয়েছে, তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।

যদিও এই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা বলেছেন, তদন্ত কমিটির যিনি প্রধান, তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপন অনুবিভাগেরও প্রধান। এই অনুবিভাগ থেকেই পদোন্নতির সুপারিশ প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে। তাই এই তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত সুষ্ঠু হবে না এবং ধামাচাপা পড়ার আশঙ্কাই বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সত্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা থাকলে গত জুলাইয়ে পিএসসি ৪৮ প্রার্থীর গোপনীয় অনুবেদনের ফাইল ফেরত পাঠানোর পর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হতো না। এই সময়ের মধ্যে কে বা কারা জালিয়াতি করেছে, তা না খুঁজে বরং বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার কিছু অভিযুক্ত কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে এসিআরগুলো পাঠিয়ে সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন।

এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, স্বার্থের সংঘাত হতে পারে, এমন কাউকে দিয়ে তদন্ত কমিটি করা উচিত নয়। এ ধরনের কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্ম কমিশন, প্রয়োজনে অন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কাঁচা পয়সা আয়ের সুযোগ তো আছেই। পদোন্নতি জালিয়াতির ঘটনার বর্ণনাই বলে দেয়, এর সঙ্গে দুর্নীতির যোগসূত্র থাকার আশঙ্কাই বেশি।