Thank you for trying Sticky AMP!!

৪ লাখ টাকার গাড়ির কাগজের দামই ১৪ লাখ

শোরুমে বাজাজ ব্র্যান্ডের সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার দাম কমবেশি পৌনে চার লাখ টাকা। কিন্তু নিবন্ধন নম্বর যুক্ত হওয়ার পর এই অটোরিকশা ঢাকায় ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামে কেনাবেচা হয় ১২ লাখ টাকার মতো। অর্থাৎ নিবন্ধনের কাগজের দামই ঢাকায় ১৪ লাখ, চট্টগ্রামে তা ৮ লাখ টাকা। মূলত অটোরিকশার নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকার এই অস্বাভাবিক ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে।

অটোরিকশার অস্বাভাবিক দামের কারণে মালিকেরা এখন চালকের কাছ থেকে দিনে গড়ে জমা নিচ্ছেন দেড় হাজার টাকা করে। অথচ সরকার–নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকা। অন্যদিকে চালকেরা শুরু থেকেই মিটারে নয়, সরকার–নির্ধারিত ভাড়ার তিন-চার গুণ বাড়তি ভাড়ায় চুক্তিতে যেতে যাত্রীদের বাধ্য করছেন। এখন ঢাকায় দেড় শ টাকার কমে কোনো অটোরিকশায় ওঠার কথা চিন্তাই করা যায় না।

২০০১ সালে বেবিট্যাক্সি, টেম্পোসহ টু–স্ট্রোকবিশিষ্ট যানবাহন তুলে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের সিএনজিচালিত অটোরিকশা বরাদ্দের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০০৪ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় ঢাকায় ১৩ হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্রায় কাছাকাছি সময়ে চট্টগ্রামেও সমসংখ্যক অটোরিকশা নামে। এসব অটোরিকশার বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে ঢাকায় পুরোনো মিশুকের পরিবর্তে প্রায় দুই হাজার অটোরিকশার অনুমোদন দেয় বিআরটিএ। এই অনুমোদনপ্রক্রিয়াতেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর নিবন্ধন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মেয়াদ শেষে একই মালিকের নামে আবার নতুন অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এর ফাঁকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে অনেকে নিবন্ধন নম্বরসহ মালিকানা অন্যের নামে বদল করছেন। এখন ঢাকায় প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার।

২০০১ সালে অটোরিকশা চালু করার সময় এর মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ বছর। মালিকদের চাপে কয়েক দফা বাড়িয়ে এখন অটোরিকশার মেয়াদ করা হয়েছে ১৫ বছর। জানতে চাইলে ঢাকা সিএনজি ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এখন ঢাকায় ১৫-১৬ লাখ টাকায় অটোরিকশা বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন তা ১৮ লাখ টাকাতেও বিক্রি হয়েছিল। চাহিদার তুলনায় অটোরিকশার সংখ্যা কম বলেই চড়া দামে হাতবদল হচ্ছে। সরকারি জমা ও ভাড়ার হার না মানার বিষয়ে তিনি বলেন, এই খাতের শুরুই হয়েছে অনিয়ম দিয়ে। এখন আর ঠিক হবে কীভাবে।

>

অটোরিকশার নিবন্ধন যাঁর, মেয়াদ শেষে তাঁর নামেই আবার বরাদ্দ
এর মধ্যেই চলছে চড়া দামে হাতবদল

বিআরটিএ সূত্র বলছে, ঢাকার ১৫ হাজার অটোরিকশার মালিক প্রায় আড়াই হাজার। এর মধ্যে কারও কারও দেড় শ বা এর বেশিও অটোরিকশা আছে। ২০০৭ সালের দিকে অটোরিকশা খাতে নৈরাজ্য বন্ধে চালকদের মধ্যে নতুন করে পাঁচ হাজার অটোরিকশা বরাদ্দের উদ্যোগ নেয় সরকার। এক দশক ধরে মামলা এবং আইনি জটিলতায় তা আটকে আছে।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অটোরিকশা খাতে বাণিজ্য হচ্ছে, এটা সত্য। চাহিদার তুলনায় অটোরিকশা কম হওয়ায় এটা হয়েছে। তবে এসব ছোট যানের সংখ্যা বাড়িয়ে সংকট নিরসনে সরকারের আগ্রহ নেই। অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবা রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর অটোরিকশা খাতের মালিক-চালকেরা কিছুটা চাপে পড়েছেন। ঢাকায় বাসের মালিকানা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে জোগান বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। মেট্রোরেল চালু হলে গণপরিবহনে চাপ কমবে। চট্টগ্রামেও গণপরিবহন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। এভাবেই অটোরিকশার বাণিজ্য বন্ধ করা হবে।

ভাড়া–নৈরাজ্য ও চালকদের দৌরাত্ম্য
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালু হওয়ার পর সরকার প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ১২ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছিল। তখন নীতিমালায় বলা হয়েছিল, ঢাকায় সিএনজি স্টেশন বাড়লে ভাড়া আরও কমানো হবে। কিন্তু স্টেশন বেড়েছে, ভাড়া আর কমেনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য সাড়ে ১২ টাকা। গত ১১ মার্চ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় অটোরিকশার ৯৮ শতাংশ চালক চুক্তিতে যাত্রী বহন করেন। মিটার কার্যকর নেই ৬২ শতাংশ অটোরিকশায়। ২০১৪ সালে এই খাতের নৈরাজ্যের চিত্র তুলে ধরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দেয় যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির হিসাব বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বছরে ৯১০ কোটি টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া হিসেবে লুটে নিয়েছেন মালিক-চালকেরা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অটোরিকশা নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি ভাড়ার হার, জমা ও মিটার মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় ঘটলে অটোরিকশার নিবন্ধন বাতিল, চালকের জরিমানাসহ নানা শাস্তি হওয়ার কথা। কিন্তু বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত কিছু জরিমানা করা ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থা নেন না। এ জন্যই নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না।