Thank you for trying Sticky AMP!!

৯৯ কোটি টাকার চেক পেলেন মুন সিনেমা হলের মালিক

আদালত প্রাঙ্গণে মাকসুদুল আলম। ছবি: প্রথম আলো

অবশেষে পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের জায়গা ও সম্পত্তি বাবদ টাকার চেক হাতে পেলেন মাকসুদুল আলম। আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের এক আদেশে চেকটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় এসেছিল। এটি মুন সিনেমা হল মামলা নামে বহুল পরিচিত। এই মামলার বাদী ছিলেন মাকসুদুল আলম। তিনি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মামলায় মুন সিনেমা হলের সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন মাকসুদুল।

আজ মামলাটির শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগে। এ সময় মুন সিনেমা হলের জায়গা ও ওই সম্পত্তি আজকাল বা সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে হস্তান্তর করার অঙ্গীকার করেন মাকসুদুল আলম ও তাঁর আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চেক হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে আদালতের মাধ্যমে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সার চেক মুন সিনেমা হলের মালিকপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মামলাটির পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।
আদালত থেকে বেরিয়ে ৭৫ বছর বয়সী মাকসুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেক হাতে পেয়েছি। আমার ছেলেমেয়েরা এখন দেশের বাইরে থাকেন। এই অর্থ আমি ব্যবসায় বিনিয়োগ করব।’
আদালতে মাকসুদুল আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাইফুল্লাহ মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে তা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলেন আদালত। পরে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনটি নিষ্পত্তি করে একটি আদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ১৮ জানুয়ারি। এতে ওই অর্থ তিন কিস্তিতে পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। একই বছরের ৮ অক্টোবর এক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সম্পত্তির মূল্য হিসেবে সরকার থেকে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা মুন সিনেমা হলের মালিক ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির বরাতে তখন আদালতকে জানানো হয়, সংশোধিত বাজেট থেকে ওই অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।