Thank you for trying Sticky AMP!!

'আমার তো এখন আর কেউ নাই'

ইউএস–বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত এফ এইচ প্রিয়কের ছবির মাঝে তাঁর মা ফিরুজা বেগম। ছবি: সাদেক মৃধা

‘আমার তো এখন আর কেউ নাই। সন্তান আর নাতনির স্মৃতি বুকে নিয়ে প্রতিদিন বাঁচি। প্রিয়কের নামে বাড়িটাতে হাসপাতাল বানাব। নাতনির স্মরণে মসজিদ-মাদ্রাসা করে সবকিছু ওয়াক্‌ফে দিয়ে মরতে চাই।’

নিজের সন্তান আর নাতনির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন নেপালে ইউএস–বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ফটোগ্রাফার এফ এইচ প্রিয়কের মা ফিরুজা বেগম। প্রিয়ক ফিরুজা বেগমের একমাত্র সন্তান ছিলেন। দুর্ঘটনায় প্রিয়কের একমাত্র মেয়ে তামারা প্রিয়ণ্ময়ী নিহত হয়। আহত হন স্ত্রী আলমুন নাহার। প্রিয়কের মামাতো ভাই মেহেদি হাসান এবং তাঁর স্ত্রী সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণাও আহত হন ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনায়।

আজ ১২ মার্চ। গত বছর ঠিক এই দিনেই নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটে বিমান দুর্ঘটনাটি। বছর ঘুরে এই পরিবারের প্রধান ফিরুজা বেগমের কাছে উপস্থিত সেই দুঃসহ স্মৃতি।

গাজীপুরের শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামে গতকাল সোমবার প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফিরুজা বেগম ছেলের ছবির গ্যালারির পাশে পাতা সোফায় বসে আছেন। তাকিয়ে আছেন জানালার দিকে, ছেলে ও নাতনি শায়িত যেখানে। দুর্ঘটনায় নিহত এই দুজনকে প্রিয়কের থাকার ঘরের পাশ ঘেঁষে করব দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গীর মাছিমপুর এলাকার একটি মসজিদ থেকে দুজন আরবি বিষয়ের ছাত্র প্রিয়কের বাসায় শোকগ্রস্ত মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তাঁরা প্রিয়কের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়াও করলেন।

এখন কীভাবে দিন কাটে আপনার—এমন প্রশ্নে মায়ের চোখে জলের ধারা নামে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফিরুজা বেগম বললেন, ‘একমাত্র সন্তানকে এক বছর আগে আল্লাহ নিয়ে গেছে। আমার পুতুলের মতন দেখতে নাতনিটাকেও আল্লাহ নিয়ে গেছে। এখন নামাজ–কালাম পড়ি আর তাদের জন্য দোয়া করি।’

প্রিয়কের মা জানান, ছবি নামের একজন নারী তাঁর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকছেন। প্রিয়ক বেঁচে থাকতে ছবিকে বাড়িতে কাজে সহযোগিতা করার জন্য রেখেছিলেন। ছবি নামটা প্রিয়কের খুব পছন্দের ছিল। তাই তাকেও আমাদের পরিবারের সদস্যের মতোই গুরুত্ব দিতেন প্রিয়ক। প্রিয়কের মা জানান, সব সম্পত্তি আইন অনুযায়ী যাদের যা পাওয়ার, তা দিয়ে বাকি সম্পত্তিটুকু তিনি মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য দান করে যাবেন। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। নগরহাওলা গ্রামে বড় একটি মাদ্রাসাসহ মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা করেছেন তাঁর প্রিয় নাতনির নামে। প্রিয়কের নামে তাঁর থাকার বাড়িটিতে একটি হাসপাতাল তৈরি করার জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে এই বাড়িতে ছোট করে হলেও একটা হাসপাতাল করব।’

ফিরুজা বেগম জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে এফ এইচ প্রিয়কের নিজের প্রিয় ব্যক্তিগত গাড়িটি ঢাকায় নেওয়ার পথে হঠাৎ আগুনে পুড়ে যায়। গাড়িটির সঙ্গে প্রিয়কের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে ছিল। প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানি ছয় মাস আগে বিয়ে করেছেন। তাঁকে বরসহ প্রিয়কের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এনেছিলেন প্রিয়কের মা। তাঁদের উপহারও দেন প্রিয়কের মা। প্রিয়কের স্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রাপ্ত সম্পত্তিও বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মা ফিরুজা বেগম বলেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। এই টাকা তিনি ব্যাংকে জমা রেখেছেন। তাঁদের ৩১টি কক্ষ ভাড়া দেওয়া। ভাড়ার টাকাও তিনি জমাচ্ছেন ছেলে ও নাতনির নামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাসপাতাল তৈরির জন্য।