Thank you for trying Sticky AMP!!

'উৎপাত' থেকে বাঁচতে গেটে বিদ্যুতায়ন, প্রাণ গেল শিশুটির

শরীরটা খারাপ ছিল সোহাগীর। ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ শোরগোল। লোকমুখে শোনেন বাড়ির পাশে ছয়তলা ভবনের মালিক শিশুদের ‘উৎপাত’ থেকে বাঁচতে টিনের দরজা বিদ্যুতায়িত করেছেন। সেই দরজায় হাত লেগে মারা গেছে ছয়-সাত বছরের এক ছেলে। আর মাটিতে গড়াচ্ছে ছেলেটির ছোট বোন।

ঘরে চোখ বুলিয়ে সোহাগী দেখেন তাঁর সাত বছরের ছেলে সকাল বাড়ি নেই। নেই ছোট মেয়ে মুনমুনও। সোহাগীর বুঝতে আর বাকি রইল না। বাইরে বেরিয়ে দেখেন, ছেলে সকালের নিথর দেহ পড়ে আছে। আর মেয়েটি তখন একজনের কোলে।

ঘটনাটি ২২ মে রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার।

ছেলে সকালকে হারিয়ে ওই দিনই বাবা মো. মন্নাফ পাঁচজনকে আসামি করে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। তবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ১ নম্বর আসামি মো. আলমগীর প্রভাবশালী। শুধু নাখালপাড়াতেই দু-তিনটি ভবনের মালিক তিনি। ছোট ছেলেমেয়েরা বাড়ির সামনে হইচই করায় বিরক্ত হচ্ছিলেন, তাই বৈদ্যুতিক তার ঝুলিয়ে রেখেছিলেন ফটকে—এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামির মোবাইল নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন। তাঁরা খোঁজ লাগাবেন।

নাখালপাড়ায় সকালদের বাসায় বসে কথা হচ্ছিল মা সোহাগীর সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, বড় ছেলে সকালের বয়স হয়েছিল সাত। তবু তাঁর ভরসাতেই ছোট ছেলে বিল্লাল ও মেয়ে মুনমুনকে রেখে কাজে বের হতেন তিনি। ২২ মে সকাল সাতটার দিকে তিনি ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ছোট বোনকে কোলে নিয়ে কোন ফাঁকে বাইরে যায় সকাল, তিনি টেরও পাননি।

পরের ঘটনাগুলো তিনি শুনেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে। তাঁদের পাশের ছয়তলা ভবনের মূল ফটকের পাশে আরও একটা বন্ধ ফটক রয়েছে। আকারে সেটা ছোট। ওই ফটকে খাতা সেলাইয়ের সুতোয় স্টিকার ও ছোট ছোট কার্ড ঝোলাচ্ছিল এক কিশোর। ঈদ কাছেই, পাড়ার ছোট ছেলেরা মোড়ে বসে স্টিকার বিক্রি করছে। একটা কার্টুন চরিত্র দেখে সকাল সেটা ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিল। ছোট বোনকে বসিয়ে সুতোয় ঝোলা স্টিকারটা স্পর্শ করতে গিয়ে হঠাৎ তার হাত গিয়ে পড়ে বন্ধ ফটকে। মুনমুন তখন উচ্চ স্বরে চিৎকার করছে। কয়েকজন রিকশাচালক এগিয়ে এসে সকালকে ডাকছেন। রাস্তায় লুটিয়ে পড়া ছোট বোন কাঁদছে, অথচ ছেলের কোনো সাড়া নেই দেখে অবাক হচ্ছিলেন তাঁরা। একপর্যায়ে কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন সকাল মারা গেছে। সকালের মৃতদেহ প্রথমে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ছোট্ট সকালের দাফন হয় নাবিস্কোর কাছে একটি কবরস্থানে।

সোহাগী বলছিলেন, ‘কত মানুষ সেদিন দাঁড়িয়েছিল। কত অনুরোধ করেছি। বাড়িওয়ালা আলমগীর তার বাসা থেকে নামলও না। খালি যদি এসে বলত, “তোমার ছেলে তো আমারই ছেলে”। গরিব মানুষ বলে ডাক শুনল না। এমন কেউ নেই যে আমার বাচ্চাটার জন্য চোখের পানি ফেলেনি।’

তেজগাঁও থানার পুলিশ সদস্যরা বলছেন, পরিবারের অভিযোগ সত্য বলে মনে হয়েছে তাঁদের। কারণ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরপরই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী ও তত্ত্বাবধায়ক পালিয়ে যান।

সোহাগী ও মন্নাফ আসামি মো. আলমগীরের ভবনের পাশের ভবনের একটি কক্ষে থাকেন। যে ভবনের ফটকে এ ঘটনা ঘটেছে, সেই ভবনে গিয়ে মো. আলমগীরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর ভবনের ভাড়াটেরাও ছিলেন চুপ। তাঁরা এমনকি সকালের মৃত্যুর খবরও জানেন না বলে দাবি করেন। তবে এলাকার ছোট শিশুরা এখনো আতঙ্কে। মো. আলমগীরের এক ভাড়াটের সন্তান বড়দের চোখ এড়িয়ে চিনিয়ে দেয় সকালদের বাড়ি। সকালের চেয়ে বয়সে অল্প বড় যে ছেলেরা মাটিতে কাগজ পেতে স্টিকার বিক্রি করছিল, তারাই দেখিয়েছে কীভাবে মৃত্যু হলো সকালের। এলাকার শ্রমজীবী মানুষেরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তাঁরা এই নির্মম ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।