Thank you for trying Sticky AMP!!

'ওডিশার বিস্ময়' আজ ঢাকায় আসছেন

অচ্যুত সামন্ত

দারিদ্র্যের কশাঘাতে তিনি বেছে নিতে চেয়েছিলেন আত্মহননের পথ। সেই অচ্যুত সামন্ত এখন ভারতের ওডিশা রাজ্যের উজ্জ্বলতম এক ব্যক্তিত্ব, ‘ওডিশার বিস্ময়’। আজ বুধবার ঢাকায় আসছেন তিনি।
অচ্যুত সামন্ত প্রায় একক চেষ্টায় ওডিশায় গড়েছেন বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি)। অচ্যুত সামন্তর গড়া কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কেআইএসএস) দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিনা মূল্যে শিক্ষার আলো বিতরণ করে চলেছে রাজ্যের হাজারও দরিদ্র আদিবাসী শিশুর মধ্যে। এই শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবককে ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি দেবে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, ‘অচ্যুত সামন্তকে ডি লিট প্রদানের বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি আমরা পেয়েছি। তিনি অসামান্য একজন মানুষ। ওডিশার মতো রাজ্যে যে অসাধারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় তিনি তৈরি করেছেন, সেটি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।’
অচ্যুত সামন্তর জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ জানুয়ারি ওডিশার কলেরাব্যাঙ্কে। ট্রেন দুর্ঘটনায় বাবার অকালমৃত্যুর পর চরম অর্থাভাবে পড়ে তাঁদের পরিবার। তিনি টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালিয়ে ওডিশার উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি নেন রসায়নে। পরে পিএইচডি সম্পন্ন করেন সমাজবিজ্ঞানে। ১৯৯২ সালে মাত্র ১২ জন ছাত্র নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি। পুঁজি ছিল মাত্র পাঁচ হাজার রুপি। সেটি এখন বিশ্বমানের একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। সবচেয়ে কম সময়ে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পাওয়ার সুবাদে লিমকা বুক অব রেকর্ডসে নাম উঠেছে ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।
কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির আছে নিজস্ব হাসপাতাল, পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম ও ট্রেনের নিজস্ব অগ্রিম টিকিটের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। ডিগ্রি প্রদান করা হয় ১০০টির বেশি বিষয়ে।
১৯৯৩ সালে অচ্যুত সামন্ত প্রতিষ্ঠা করেন কেআইএসএস। ওডিশার আদিবাসী এবং দরিদ্র শিশুরা ‘কেজি টু পিজি’ বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়া আর পড়ালেখার সুযোগ পায় এই প্রতিষ্ঠানে। কেআইআইএসেও এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।
২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৩ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতে কেআইএসএস রাগবি দল। একই বছরে টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিচারে ‘আইকন অব ওডিশা’ নির্বাচিত হন অচ্যুত সামন্ত। সর্বভারতে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার রেকর্ড অচ্যুত সামন্তর দখলে। ২০১২ সালে পেয়েছেন জওহরলাল নেহরু অ্যাওয়ার্ড। সমাজসেবায় অবদানের জন্য তিনি ভারত ছাড়াও স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, চেক রিপাবলিকসহ বহু দেশ থেকে। তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে টাইম, রিডার্স ডাইজেস্টসহ বিশ্বের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত এই সমাজসেবক বাস করেন দুই কক্ষের একটি ভাড়া বাড়িতে।