Thank you for trying Sticky AMP!!

'গোপন সমস্যার' ওষুধ খেয়ে কিশোরীর মৃত্যু

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় ‘মেয়েদের গোপন সমস্যার’ ওষুধ খেয়ে লাবনী আক্তার (১২) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এই ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নারীসহ আরও পাঁচজন।

সোমবার উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের ঝাউপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। অসুস্থরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লাবনী ওই গ্রামের কৃষি শ্রমিক আবদুল লতিফের মেয়ে। সে ঝাউপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

অসুস্থরা হলেন: ঝাউপাড়া গ্রামের ভোলা (৪৫), আবুল হোসেন (৭০), তাঁর ছেলে রিপন হোসেন (২২), ইসরাইল হোসেন (২৭) ও রোজিনা বেগম (৩৫)।

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, গতকাল রোববার আশপাশের কয়েকটি গ্রামে মাইকিং করে ‘মেয়েদের গোপন সমস্যার’ সমাধান ও ছেলেদের যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করে। গ্রামের নারী-পুরুষেরা তা কিনে খাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। ওই ওষুধ খেয়ে লাবনী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালে যান।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক রবিউল করিম বলেন, অল্প বয়সে খালি পেটে অধিক শক্তিশালী ওষুধ খাওয়ায় লাবনীর তাৎক্ষণিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এতে কিডনি ও হৃদযন্ত্র অকার্যকর হয় এবং খাদ্যনালী ফেটে তার মৃত্যু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের সহনশক্তি বেশি থাকায় তাঁরা অসুস্থ হয়েছেন। তবে তাঁদের কিডনি ও হৃদযন্ত্র ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এক শ্রেণির হকারদের চাটুকারিতার ফাঁদে পড়ে মানুষ এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ সেবন উচিত নয়।

লাবনীর দাদি লতিফুল বেওয়া বলেন, লাবনী দীর্ঘদিন ধরে ‘মেয়েদের গোপন সমস্যার’ সমস্যার কারণে শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও তার শরীরের কোনো উন্নতি হয়নি। গতকাল বাড়ির পাশ দিয়ে অপরিচিত এক ব্যক্তি মাইকিং করে ওষুধ বিক্রি করছিল। গ্রামের অনেকের সঙ্গে তিনিও ১০০ টাকায় ১০ বড়ি কিনেছিলেন নাতনির জন্য। ওষুধ বিক্রেতার পরামর্শে সকালে লাবনীকে খালি পেটে একটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। ওষুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার অস্থিরতা শুরু হয়। একপর্যায়ে ‘বুক জ্বলে গেল, পুড়ে গেল’ বলে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকে। সকাল নয়টার দিকে তাকে গুরুদাসপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে আধা ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

লাবনীর বাবা আবদুল লতিফ এভাবে মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মতিন জানান, লাবনীর লাশ দাফনের জন্য তার পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নগদ তিন হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় হকারদের বিক্রি করা ওষুধগুলো না খাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

গুরুদাসপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার মাহাতো বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে নাটোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই ওষুধ বিক্রেতাকে চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা চলছে।