Thank you for trying Sticky AMP!!

'ছেলেধরা' সেই শাহেদা ১০ বছর পর সন্তানের কাছে

মানসিক রোগী শাহেদা আক্তারকে তাঁর দুই ছেলের হাতে হস্তান্তর করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘ ১০ বছর পর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পেরেছেন শাহেদা আক্তার ওরফে সিনু (৪৫)। চার সন্তানের এই মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি ছাড়েন বলে পরিবার জানিয়েছে। গত ২৬ জুলাই এই নারীকেই ছেলেধরা গুজবে টেকনাফে গণপিটুনি দেওয়ার সময় পুলিশ উদ্ধার করে। শাহেদাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের জিয়ানগর থানার তগড়া হাওলাদারবাড়ি এলাকায়।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে দুই ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল ও মোহাম্মদ সজীবুলের কাছে টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ শাহেদাকে হস্তান্তর করে। মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানসিক রোগীদের তহবিল’ (মারোত) এই নারীর পরিবারকে খুঁজে বের করে।

মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান জানান, ২৬ জুলাই টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি সময় স্থানীয় লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে শাহেদার ওপর চড়াও হয়। তবে টেকনাফ থানার পুলিশ অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এরপর পুলিশ অনেক চেষ্টা করে তাঁর অভিভাবক খুঁজে না পেয়ে মারোতের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

আবু সুফিয়ান বলেন, তাঁদের তিন সদস্যের একটি দল ওই নারীর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে তাঁর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। তিনি অধিকাংশ তথ্য এলোমেলোভাবে দেন। তবে তাঁর কথায় গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের জিয়ানগরের পাড়েরহাটে বলে একাধিকবার ঘুরেফিরে আসে। তখন মারোতের সদস্যরা জিয়ানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহায়তায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয়। এরপর ছবি, ভিডিও আদান-প্রদানের মাধ্যমে ওই নারীর পরিচয় উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয়।

শাহেদার দুই ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহেদা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাঁর সঙ্গে তাঁদের বাবার বিচ্ছেদ হয়। এরপর বড় ছেলে সাইফুল তাঁর মাসহ (শাহেদা) ছোট তিন ভাই বোনকে নিয়ে ফেনী চলে আসেন। এর মধ্য এক মেয়ের বয়স ছিল মাত্র এক বছর। সাইফুলের ভাষ্য, ১০ বছর আগে ফেনী থেকেই তাঁদের মা হারিয়ে যান।

সাইফুল জানান, তিনি ও তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ সজীবুল পেশায় রিকশাচালক। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে রিকশা চালান। এর আগে কুমিল্লায় চালিয়েছেন। সজীবুল রিকশা চালান ফেনী শহরে। এই দুই ভাই এসব শহরের অলিগলিতে তাঁদের মাকে খুঁজে বেড়িয়েছেন।

মোহাম্মদ সাইফুল বলেন, ‘মাকে খোঁজার জন্য কী–না করেছি। এরপরও তাঁর সন্ধান মেলেনি । তবে ১০ বছর আগে ফেনী থেকে হারিয়ে যাওয়া মায়ের সন্ধানের খবর পাওয়ার পর এক ঝলক দেখার জন্য মন ছটফট করছিল। তাঁকে পেয়েছি, এখন আর কোথাও যেতে দেব না।’ তিনি টেকনাফ থানার পুলিশ ও মারোতের সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।

আবু সুফিয়ান বলেন, অসহায় মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা এই সংগঠন ইতিমধ্যে ১৮ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। শাহেদা ১৯তম। হারিয়ে যাওয়া মাকে ১০ বছর পর তাঁর ছেলেমেয়ে ফিরে পেলের, এইটা তাঁদের বড় সফলতা।

টেকনাফ মডেল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম এস দোহা বলেন, মারোত সংগঠনের সবার প্রচেষ্টায় একটি পরিবার তাদের স্বজনকে ফিরে ফেল—এটাই বড় কথা। এ হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় মারোতের প্রশংসা করেন তিনি।