Thank you for trying Sticky AMP!!

'ব্র্যাক অন্বেষা'র গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধন

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর ক্যাম্পাস ভবনের ছাদে নির্মিত এই গ্রাউন্ড স্টেশনটি উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছবি : সাজিদ হোসেন

বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট) ‘ব্র্যাক অন্বেষা’র জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর ক্যাম্পাস ভবনের ছাদে নির্মিত এই গ্রাউন্ড স্টেশনটি উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
গত বছরের জুনে কৃত্রিম উপগ্রহটি বানানোর জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কিউটেক) সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে কিউটেকের ল্যাবরেটরি অব স্পেস ক্র্যাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টারঅ্যাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তত্ত্বাবধানে এটা বানানোর কাজে যুক্ত হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ও বর্তমানে কিউটেকে গবেষণারত বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মায়সূন ইবনে মনোয়ার। স্যাটেলাইটের নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত কাঠামো তৈরির সব কাজই করেন এই শিক্ষার্থীরা। এর ওজন প্রায় এক কেজি। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তা মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (জেএএক্সএ) কাছে হস্তান্তর করা হয়। আগামী ২ জুন এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যুক্ত হবে। সেখান থেকে উৎক্ষেপণের পর এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই মহাকাশ থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, নদী, ফসলের মাঠ থেকে শুরু করে নগর-পাহাড়-সাগর—সবকিছুরই পর্যায়ক্রমিক আলোকচিত্র পাওয়া যাবে।
গ্রাউন্ড স্টেশনটি উদ্বোধনের সময় স্কাইপের মাধ্যমে স্যার ফজলে হাসান আবেদ স্যাটেলাইটটি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত তিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিনন্দন জানান। তিনি আশা করেন, শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
এ ছাড়া ফজলে হাসান আবেদ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কেবল গবেষণার জন্য মোট জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়। বাংলাদেশে সেটা সম্ভব না হলেও জিডিপির অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা উচিত।
গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালিব। এ সময় গ্রাউন্ড স্টেশন টিমের পক্ষ থেকে অ্যানটেনা নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য-উপাত্ত গ্রহণের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
গ্রাউন্ড স্টেশনের বিষয়ে ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর মো. খলিলুর রহমান বলেন, এটি মূলত তিন ধরনের কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে মহাকাশে পরিভ্রমণরত স্যাটেলাইটটি চিহ্নিত করে এর থেকে তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ, স্যাটেলাইটটি কীভাবে, কী কী কাজ করবে তার নির্দেশনা প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করা। এই গ্রাউন্ড স্টেশনটিও তৈরি করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর মধ্যেই এই গ্রাউন্ড স্টেশন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দুটি স্যাটেলাইট তথ্য গ্রহণ করা শুরু করেছে।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ স্যাটেলাইটটি মহাকাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জলাভূমি, নগরায়ণ ও কৃষি পরিস্থিতির উচ্চমানের ছবি পাঠাতে সক্ষম। ৪০০ কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে উৎক্ষেপণের পর এটি প্রতিদিন ১৬ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘুরে যাবে দিনে চার থেকে পাঁচবার। এ সময় কৃত্রিম উপগ্রহটি থেকে ছবিও ডাউনলোড করা যাবে।
দেশে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করা ও কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবি ব্যবহার করা ব্যক্তিরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো বেশ আগেই কৃত্রিম উপগ্রহের মালিক হয়েছ। আর দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানই শুধু এর মালিক। এত দিন বাংলাদেশ মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ভারতের কাছ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহের নেওয়া ছবি কিনত। এতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে তা বাংলাদেশের ভূমিরূপ ও প্রকৃতি বোঝার উপযোগী হতো না। দেশীয় কৃত্রিম উপগ্রহ হলে আগের ওই সমস্যা থেকে বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে মুক্তি পাবে।

আরও পড়ুন: দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট প্রস্তুত