Thank you for trying Sticky AMP!!

'ভেজাল ইয়াবা বের করা যেতে পারে'

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া মাদক ও ইয়াবা ব্যবসা ঠেকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারে প্রথম আলো ফেসবুক পেজে পাঠকের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়। প্রথম ঘণ্টাতেই হাজারের বেশি মন্তব্য  পড়ে। বেশির ভাগ পাঠকই মনে করেন, যেভাবে এ দেশে এই ব্যবসা জেঁকে বসেছে, তা ঠেকানো প্রায় অসম্ভব।

শামীম আল মামুন সরাসরি বলছেন, ‘এই ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ যাদের এ বিষয়ে দেখভাল করার দায়িত্ব, তারা নিজেরাই এর সঙ্গে জড়িত। কাজেই এই ব্যবসা বন্ধ হবে না অথবা বন্ধ করতে দেওয়া হবে না।’

শামসুজ্জোহার মন্তব্যও অনেকটা এ রকম। তিনি বলছেন, ‘বেশির ভাগ নেশা দ্রব্যের জোগানদাতারা রাজনৈতিক দলীয় নেতা এবং অসৎ পুলিশদের ছত্রচ্ছায়ায় চলে। এ ক্ষেত্রে সত্যিকারের আইনের প্রয়োগ অপরিহার্য। প্রত্যেক থানায় পুলিশদের ওপর নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এটা চিহ্নিত করা জরুরি যে কারা টাকার বিনিময়ে সুযোগ করে দিচ্ছে।’

অসংখ্য গুরুগম্ভীর মন্তব্যের ভিড়ে কিছু মজার মন্তব্যও এসেছে পাঠকের কাছ থেকে। মীর মো. ফাহাদ লিখেছেন, ‘ভেজাল ইয়াবা বের করা যেতে পারে। উৎসাহী লোকজন দেখবে ইয়াবা খেয়ে অনুভূতি পাচ্ছে না, তখন ছেড়ে দেবে।’

সজীব আহমেদ লিখেছেন, ‘সরকারিভাবে সবাইকে ফ্রি ইয়াবা, মাদক সরবরাহ করতে হবে এবং সবাই যাতে ইয়াবা এবং মাদক পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। তাহলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেউ আর টাকা দিয়ে ইয়াবা কিনবে না। এর ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবে এবং ইয়াবা আর মাদকের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যাবে।’

ইউসুফ সেলিম লিখেছেন, ‘ইয়াবার আদলে কিছু নকল বিষাক্ত ট্যাবলেট বাজারে ছেড়ে দেওয়া হোক, তাতে করে প্রাথমিকভাবে কিছু কুলাঙ্গার হাসপাতালে ভর্তি হবে, ক্ষেত্রবিশেষে কিছু মারাও যাবে। কিন্তু এর এই ভয়ংকর পরিণতি দেখে পরবর্তী সময়ে এরা এই নেশা থেকে দূরে সরে যাবে। এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করে যদি সুফল পাওয়া যায়। তবে ক্রমান্বয়ে অন্য নেশার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’

মো. শাহ জালালের মতে, সরকার বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়, সেভাবে মাদক দুর্নীতি অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই কাজ হয়ে যাবে।


মজা নয়, গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন সাইফুল আলম। তাঁর মতে, ‘রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠা মাদক গডফাদারদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের ভেতরের কিছু দুষ্কৃতকারী লোভী আইনের লোক আছে, তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনতে হবে। সবশেষে জনগণ ও পরিবারগুলোকে সচেতন হতে হবে।’

সমাজ ও পরিবারের ভূমিকার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উদ্যোগের সম্মিলিত কার্যকারিতাই এই মাদক ব্যবসা ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মত দিয়েছেন অনেক পাঠক।

ফারুক ফারাবি ফারুক বেশ বিশ্লেষণধর্মী মতামত প্রকাশ করেছেন। লিখেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। আর দেশে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নিয়মিত ইয়াবা সেবন করছে। শুধু ভারত থেকেই দেশে আসে তিন কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে ফেনসিডিল। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেকটা খোলামেলাভাবেই মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। তাই মাদকের এই অপব্যবহার রোধে করণীয় সম্পর্কে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের বক্তারা বলেন, এসব বন্ধ করতে হলে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে উদ্যোগী হয়েও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সবচেয়ে আগে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হবে প্রতিটি ঘর, অভিভাবক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকে। তা ছাড়া মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। আমাদের এই মুহূর্তে উচিত মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, বেকারদের কর্মসংস্থান ও স্কুল-কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ যেসব মাদকদ্রব্য আসে, তার সিংহভাগ আসে নাফ নদ ডিঙিয়ে। জেলেরা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। নাফ নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে নদীপথে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসা অনেকাংশে বন্ধ হবে।’

এহসান ইমন প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘এ দেশ থেকে হেরোইনসহ সব ধরনের মাদক নিষিদ্ধ করতে হবে। যার কাছে যে অবস্থায় মাদক পাওয়া যাবে, তাকে তৎক্ষণাৎ ৩ মাসের জেল (বিনা বিচারে) দিতে হবে। ওই সময়ে বিচার চলবে, প্রমাণিত হলে ৫ বছরের জেল, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও তিন বছরের জেল দিতে হবে। এটা কার্যকর করেন, লোকজন মাদক ছুঁয়েও দেখবে না।’

সাব্বির আহমেদের সোজাসাপ্টা কথা, ‘প্রত্যেকটি থানায় তথ্য আছে, কারা মাদক ব্যবসা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অথবা বাধ্য হয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করলেও পরে বিভিন্ন কারণে ছেড়ে দেয়। সুতরাং মাদক বন্ধ হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সদিচ্ছায়।’

আরিফিন শেখ নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নিজে দেখছি ইয়াবাসহ ডিবি পুলিশের কাছে ধরা খেয়েও একজন মাদক ব্যবসায়ী মাত্র এক দিন পরেই বের হয়ে আসে।’