Thank you for trying Sticky AMP!!

'মা কখন আসবে?'

নুসরাত

বাড়ির উঠানে লাশবাহী গাড়ি। আর গাড়িটি ঘিরে চলছে স্বজনদের কান্না, আহাজারি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে মাতুয়াইলের উত্তর রায়েরবাগ। বাঁ পাশের সড়ক ধরে সামনে এগিয়ে খান বাড়ি চৌরাস্তায় যেতেই ভেসে আসে কান্নার শব্দ। বাঁ দিকে পাশাপাশি তিনটি বাড়ির উঠানে ওই লাশবাহী গাড়িটি। এ গাড়িতেই রোকসানা বেগম লায়লার (৩৭) লাশ।গত মঙ্গলবার দুপুরে পাঁচ বছরের সন্তান নুসরাত সামিয়াকে নিয়ে স্কুল থেকে রিকশায় বাসায় ফেরার পথে কমলাপুরে মিনিবাসের চাপায় মৃত্যু হয় তাঁর। এ কয়েক দিন তাঁর লাশ রাজধানীর বারডেমের হিমঘরে রাখা ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির উঠানে তাঁর লাশবাহী গাড়ি ঢুকতেই আর্তনাদে ফেটে পড়েন স্বজনেরা।চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু যে দেখেছে, সে নুসরাত এখনো প্রায় নির্বাক। কিছু বুঝে ওঠার মতো বয়স তার হয়নি। স্বজনেরা জানান, এ কয়েক দিন সে আপন মনে খেলেছে। মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করেছে, ‘বারডেম থেকে মা কখন আসবে?’পাশাপাশি তিনটি বহুতল বাড়ির মালিক রোকসানার স্বামী সাইফুল্লাহ খান ও তাঁর ভাইয়েরা। একটি বাড়ির তিন তলায় স্বামী ও তিন শিশুসন্তান নিয়ে থাকতেন রোকসানা। তাঁর মৃত্যুতে ওই তিন বাড়িসহ পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিন দিনের শোক ছাপিয়ে গতকাল তা পরিণত হয়েছে ক্ষোভে। সড়ক দুর্ঘটনায় কম শাস্তির বিধানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ওই বাড়ির অনেকেই নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সমালোচনা করলেন। মিনিবাসটির মালিক ও চালককে এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।

রোকসানার স্বামী সাইফুল্লাহ বললেন, ‘এ দেশে কোনো বিচার নাই। আমার জীবনে আমি দেখিনি, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

সাইফুল্লাহ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন পাশেই অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন রোকসানার ভাই মনজু মোল্লা। বললেন, ‘এটা হত্যাকাণ্ড। হত্যার বিচার যেমন মৃত্যুদণ্ড, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার বিচার মৃত্যুদণ্ড হবে না কেন? কেন ৩০৪-এর খ তে মামলা হবে, কম শাস্তি হবে?’

মনজু বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, মিনিবাসটি প্রথমে রিকশাটিকে ধাক্কা দিয়ে ব্রেক কষে। ধাক্কায় নিচে পড়ে যায় রোকসানা। ওই অবস্থায় চালক মিনিবাস চালিয়ে তার গায়ের ওপর উঠিয়ে দেয়। যদি কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ভয়ে হলেও এমন বেপরোয়া ভাব আসত না।’

বেলা দুইটার দিকে লাশবাহী গাড়ির একটি অংশ খোলা হলো। মায়ের লাশ দেখে অঝোরে কাঁদছিল দুই সন্তান রাফিউর রহমান ও মেহেদী হাসান। কিন্তু নুসরাত এখনো নির্বাক, স্তব্ধ।

কিছুক্ষণ পর গাড়ির কাচ বরাবর ল্যাপটপ এনে রোকসানার মুখটি শেষবারের মতো স্কাইপিতে দেখানো হলো মা রওশন আরা বেগম ও শাশুড়ি সুফিয়া বেগমকে। দুজনই হজ করতে এখন সৌদি আরবে আছেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে রোকসানার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মাতুয়াইল কবরস্থান জামে মসজিদে। বাদ আসর জানাজা শেষে মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করা হয়।