Thank you for trying Sticky AMP!!

'শিক্ষার্থীদের নিয়ে টেবিল টেনিস খেলছেন শিক্ষকেরা'

এক মাস বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার খুলেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু পৃথক দাবিতে শিক্ষকদের দুটি পক্ষের আন্দোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে বিজ্ঞান অনুষদ ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ক্লাস–পরীক্ষা। এই দুই অনুষদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস–পরীক্ষা চালুর দাবিতে বুধবার থেকে বিক্ষোভ করেছেন।

সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ওয়াজেদ ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিজ্ঞান অনুষদ ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ চলে বেলা একটা পর্যন্ত। এ সময় তাঁরা ক্লাস–পরীক্ষা চালুর দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, কষ্ট করে মা–বাবা টাকা পাঠান, যাতে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি করতে পারেন। অথচ শিক্ষকেরা নিজেদের স্বার্থে আমাদের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখেন না। বৃহস্পতিবারের মধ্যে ক্লাস–পরীক্ষা চালু না হলে প্রশাসনিক ভবনসহ সব বিভাগে তালা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুমকিও দেন শিক্ষার্থীরা।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল আলম বলেন, ‘ক্লাস–পরীক্ষা চালুর দাবিতে প্রশাসনের কাছে গেলে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দেখিয়ে দেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা দেখিয়ে দেয় প্রশাসনকে। শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে শিক্ষকেরা রীতিমতো টেবিল টেনিস খেলছেন।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের মূল ফটকে বর্ধিত বেতন–সুবিধার প্রাপ্যতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত দুই শিক্ষকের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন ৫৭ সহকারী অধ্যাপক। অন্যদিকে প্রশাসন ভবনের সামনে যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকের বরখাস্তের দাবি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

বেতন নিয়ে আন্দোলনকারী ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, প্রশাসনের মদদে ছাত্র নামধারী কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপরে হামলা ও নারী শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছেন। অথচ প্রশাসন সেগুলোর বিচার না করে রেজিস্ট্রারকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করল। এগুলো বিমাতাসুলভ আচরণ। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকদের বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলনকারী প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের পক্ষে প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম হারুন অর রশিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার বলরাম রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয় একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। অথচ তিনি (উপাচার্য) কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে ঢাকায় রিজেন্ট বোর্ডের সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। প্রশাসন বেশ কয়েকবার আশ্বাস দিয়েছে বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করার। কিন্তু তারা এখন টালবাহানা করছে। প্রশাসন বিষয়গুলোর সুরাহা না করে উল্টো দুজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং মামলা–হামলা চাপিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

উপাচার্য আবুল কাসেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ইনক্রিমেন্ট (বর্ধিত বেতন) প্রাপ্যতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিজস্ব কোনো এখতিয়ার নেই। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারেন। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের সহযোগিতা করবে।

যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষকদের বহিষ্কার এবং রেজিস্ট্রারকে লাঞ্ছিত করার অপরাধে দুজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উত্থাপন করা হবে এবং অপরাধীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার পর রিজেন্ট বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার সময় প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করবেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন কাজ করছে।