Thank you for trying Sticky AMP!!

'সমর্থন' চেয়ে 'দোয়া' পেয়েছেন!

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করছেন শাহ আহমদ শফী প্রথম আলো

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী—এ রকম একটি ছবি গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। এ ছবি ভবিষ্যতে নির্বাচনী পোস্টারে স্থান পেলেও হয়তো অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শফী হুজুরের কাছে শুধুই কি দোয়া চাইতে এসেছিলেন এরশাদ? আর কিছু কি চাওয়ার ছিল না?
পত্রিকান্তরে লেখা হয়েছে, শফী হুজুরের কার্যালয়ে হাসিমুখে ঢুকে মলিন মুখে বের হয়েছেন এরশাদ। তাহলে ৫০ মিনিটের এ বৈঠকে নিশ্চয় দোয়া ছাড়াও অন্য আরও কিছুর প্রত্যাশা ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতির।
১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে এসে বিমানবন্দর থেকে সোজা হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায় চলে যান এরশাদ। আগের দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল চট্টগ্রাম আসছেন তিনি, এবং আসছেন মূলত শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতেই। জনমনে কৌতূহল ছিল। বলা চলে বিষয়টা ছিল ‘টক অব দ্য টাউন।’
নানা সূত্র থেকে জানা যায়, ইসলামপন্থী একটি জোট গঠন করার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে এসেছিলেন তিনি। ‘হেফাজতে ইসলাম’কে সেই জোটে থাকার অনুরোধও জানিয়েছেন হেফাজতের আমিরের কাছে। তাঁর শাসনামলে ইসলামের জন্য কী কী করেছেন তাঁর ফিরিস্তি দিয়েছেন এরশাদ। ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে তাঁর নেতা-কর্মীদের যে সক্রিয় সমর্থন ছিল, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আহমদ শফী বলেছেন, হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, নির্বাচনী জোটে থাকার কোনো সুযোগ এ দলের নেই।
এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাটহাজারী এলাকার সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি অবশ্য ইসলামি জোটের প্রস্তাব দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে জাতীয় পার্টি জোট গঠন করতে চায়। তাই আমরা সকল সামাজিক শক্তির সহযোগিতা ও সমর্থন চাইতে মাঠে নেমেছি।’ হেফাজতে ইসলাম একটি আন্দোলন, একটি সামাজিক শক্তি উল্লেখ করে আনিস মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়েছি।’
অর্থাত্ ‘সমর্থন’ চেয়ে ‘দোয়া’ পেয়েছেন এরশাদ। এ দুটির তফাত যে কতটুকু তা তাঁর চেয়ে ভালো আর কে বুঝবেন! বুঝেছেন বলেই হাসিমুখে ঢুকে মলিন মুখে বেরিয়ে এসেছেন তিনি।
শফী হুজুরের দোয়া নিয়ে ফিরে যাওয়ার পরদিনই ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দিয়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। দর-কষাকষিটা যে ভালোই হয়েছে তা বোঝা যায় নতুন মন্ত্রিসভায় তাদের সদস্যসংখ্যা দেখে। সরকারবিরোধী কথাবার্তা বলে মাঠ গরম করার পর নানা হিসাব-নিকাশ করে সরকারে অংশ নিয়ে এরশাদ এখন সম্ভাব্য নতুন জোটের শরিকদের কীভাবে ম্যানেজ করেন কিংবা আদৌ করতে পারেন কি না সেটাইদেখার বিষয়।
এদিকে আবার রাজনৈতিক বিষয়ে ‘অনাগ্রহী’ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী খেপেছেন এরশাদের ওপর। আহমদ শফীর সঙ্গে বৈঠক করে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে পরদিনই মন্ত্রিসভায় যোগদানের সিদ্ধান্তকে নাটক বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেছেন, ‘এরশাদ জাতির সঙ্গে ডিজিটাল বেইমানি করেছেন।’
হোফাজতে ইসলামের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই দাবি করেও এরশাদের সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের মতো একটি ‘রাজনৈতিক’ সিদ্ধান্তে কেন এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন তিনি? কেমন একটা সন্দেহ জাগে মনে। কোনো একটা রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি সুপ্ত সমর্থনের আভাস পাওয়া গেল না তাতে?
বোঝা যাচ্ছে, ‘দোয়া’ ও ‘সমর্থনের’ রাজনীতিটা আরও প্রকট হয়ে উঠবে সামনের দিনগুলোতে।