Thank you for trying Sticky AMP!!

'সিটিংয়ের নামে চিটিং সার্ভিস মেনে নিয়েছি'

দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারিয়েছেন কলেজছাত্র রাজীব। ভিড়ের কারণে রাজীব দাঁড়িয়ে ছিলেন বিআরটিসির দোতলা বাসের পেছনের ফটকে। তাঁর একটি হাত সামান্য বাইরে বেরিয়েছিল। পেছন থেকে অন্য একটি বাস ওভারটেক করার জন্য বিআরটিসির বাসের গা ঘেঁষে গেলে দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

চালকদের বেপরোয়া আচরণের কারণে সড়কে প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে এ সমস্যা উত্তরণে করণীয় কী হতে পারে, তা জানতে চেয়ে পাঠকদের মন্তব্য করতে বলা হয়েছিল। পাঠকেরা সেখানে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। বেশির ভাগ পাঠকই দুর্ঘটনার জন্য ট্রাফিক আইন মেনে না চলা এবং সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন।

ইশরাক রুশদি লিখেছেন, ‘কোনো উপায় নেই। ব্যক্তি সচেতন না হলে আমাদের মতামতে কিছু যায় আসে না। ড্রাইভাররা কি আমাদের মতামত পড়ছে?’

মোবারাক হোসেন সবুজ লিখেছেন, ‘যাত্রীদের যেমন ঝুলে যাওয়ার অভ্যাস আছে, তেমনি বাস বা গাড়িচালকদের ওভারটেক করার প্রবণতা আছে। এ দুটি ব্যাপারে সচেতন না হলে এবং ট্রাফিক আইন না মানলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এখনই সময় নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাত্রার ব্যবস্থা করার।’

পুরো ব্যবস্থাই ঢেলে সাজানো উচিত—এমন পরামর্শ দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম রূপম। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের লোকাল বাসের চালকেরা অনেক বেশি আনাড়ি। অনেকেরই লাইসেন্স নেই। ৯৫ ভাগ গাড়ি ভ্রমণের অনুপযুক্ত। মনে হয়, দেখার কেউ নেই। রাস্তা বন্ধ করে ওরা যাত্রী ওঠায়, কিন্তু পেছন থেকে কোনো গাড়ি যদি আসে, তখন ওদের মাথা খারাপ হয়ে যায়—ডানে-বামে চাপ দেয়। এতে অনেক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই সঙ্গে দুর্ঘটনাও ঘটে। এসব থেকে উত্তরণের কয়েকটি উপায় হতে পারে। যেমন যেকোনো রুটে একটি কোম্পানির গাড়ি রাখা, বাসচালকদের লাইসেন্স নিশ্চিত করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ির প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং সরকার আর পুলিশের কঠোর মনোভাব।’

পরিবহন খাতের সবাইকে ব্যাপকভাবে সচেতন করে তুলতে হবে—এমনটাই মনে করেন মাহফুজ রহমান। তিনি লিখেছেন, ‘বাসের হেলপার ড্রাইভারদের সচেতন করে তুলতে হবে। সারা দেশে বাসের গায়ে ব্র্যান্ডিং করতে হবে—কীভাবে গাড়ি চালাবে। কার্টুন একে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। সারা দেশে, ঢাকা সিটি থেকে শুরু করে থানা পর্যায়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাস মালিক সমিতির সঙ্গে একটানা কাজ করতে হবে। পত্রিকা ও টিভি মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।’ এ ছাড়া যাত্রীদের নিজেদের সচেতন হওয়ার কথাও বলেন তিনি। তাঁর পরামর্শ, ‘নির্দিষ্ট জায়গায় বাস থামাতে হবে, না হলে বড় অঙ্কের জরিমানা আদায় করতে হবে। সরকারকে বাস থামানোর জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে হবে। রাস্তার ওপর থেকে হাটবাজার দূরে নিতে হবে।’

যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন আলামিন খানও। তিনি লিখেছেন, ‘শুধু ড্রাইভারদের দোষে না কিছু যাত্রীদেরও দোষ আছে, ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, ভিড়ের বাসেও ওঠা, এগুলোতে তো চালকের দোষ নেই।’

মো. মনির মনে করেন, যত দিন পর্যন্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া না হবে, তত দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। তিনি লিখেছেন, ‘চালক জানে দুর্ঘটনার নামে বাস চাপা দিয়ে মারলেও তাদের শাস্তি হয় না, আর হলেও নামে মাত্র, সেখানে হাত পা হারালে চালকের কিছুই হবে না।’

বাসের সার্ভিস নিয়ে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেছেন কামরুজ্জামান মামুন। তাঁর মন্তব্যে লিখেছেন, ‘উপায় নেই, মেনে নিতে হবে। যেমন মেনে নিয়েছি সিটিংয়ের নামে চিটিং সার্ভিস, ৫ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা, ২০ কিলোমিটারের বাস ভাড়া ১০০ টাকা। অঙ্গহানি, প্রাণহানি—এগুলো সবই মেনে নিতে হবে। উপায় নেই।’

এহসানুল করিম নিলয় লিখেছেন, ‘আমিও বহুবার এমন ঘটনা দেখেছি। আমাদের দেশের বাসচালকেরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়। শুধু বাসই নয়, বহু প্রাইভেট কারের চালকেরাও নিয়ম মানে না। আর শুধু এরা নয়, এদের যারা চালানোর অনুমতি দেয়—উভয় পক্ষই সমান অপরাধী।’

সুপ্রিয়া লিপি লিখেছেন, ‘পুলিশ প্রশাসন ঠিক ও নীতিমান থাকলে কখনো এ রকম হতো না। যারা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা দিয়ে চলাচল করে, কখনো তো এ রকম আচরণ করে না। আইন ঠিক থাকলে চালকও ঠিক হয়ে যাবে।’

মো. ইমরান লিখেছেন, ‘প্রতিটা ড্রাইভারের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রশিক্ষণ শেষে লাইসেন্স দিতে হবে। আর কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটালে উপযুক্ত শাস্তিও দিতে হবে।’