Thank you for trying Sticky AMP!!

৭৬৫ নম্বর বাড়িতে প্রতিস্থাপিত হলো ‘খণ্ডিত’

‘খান সারওয়ার মুরশিদ বার্ষিক গ্র্যান্ট’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিল্পী রফিকুন নবী। উপস্থিত ছিলেন শারমীন মুরশিদ, রোকেয়া সুলতানা, আতিয়া ইসলাম ও শারদ দাশ

রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের ৭৬৫ নম্বর বাড়িতে থাকতেন আলোকিত দম্পতি খান সারওয়ার মুরশিদ ও নূরজাহান মুরশিদ। বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কাছে এই বাড়ি ছিল অনেকটা অভয়াশ্রমের মতো। স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে এই সব ব্যক্তি যুক্তি-পরামর্শের জন্য বারবার জড়ো হয়েছেন এই বাড়িতে। মঙ্গলবার বাড়ির সামনের একটি অংশজুড়ে প্রতিস্থাপিত হলো শারদ দাশের শিল্পকর্ম ‘খণ্ডিত’।

খান সারওয়ার মুরশিদের নামে চালু করা অনুদানপ্রাপ্ত ‘খণ্ডিত’ শিল্পকর্মটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে এই ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করি না, কিন্তু পছন্দ করি। শিল্প এমন এক মাধ্যম, যা এক এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এক এক রকম ব্যাখ্যা করা যায়। শিল্পকর্মে ভাঙা আয়নার ব্যবহার আমি মার্কিন দেশের একটি প্রদর্শনীতে দেখে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছিলাম। তখন ওই দেশেরই তিন বৃদ্ধা আমাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করে বলল, এটা প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমি জানি, বিষয়ভাবনা শিল্পীর কাজ অনেক বেশি নিরীক্ষাধর্মী করে তোলে। শারদ দাশের কাজেও তেমন ভাবনার ছাপ দেখলাম।’

জুন মাসে ফেসবুকে ‘৭৬৫ নং শব্দ-কল্প-বাড়ি’ নামে নতুন শিল্পকর্মের ধারণা আহ্বান করে খান সারওয়ার মুরশিদ ও নূরজাহান মুরশিদের চেতনাকে ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করা সংগঠন ‘উত্তরসূরি’। এতে জমা পড়ে ১৪ জন শিল্পীর ১৭টি প্রস্তাবনা। সেসবের মধ্য থেকে বিচারক রোকেয়া সুলতানা ও ঢালী আল মামুন সেরা প্রস্তাবনাটিকে অনুদানের জন্য বাছাই করেন। উত্তরসূরি: নূরজাহান-সারওয়ার মুরশিদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শিল্পী শারদ দাশ পান খান সারওয়ার মুরশিদ গ্র্যান্ট। এগিয়ে থাকা তিন শিল্পীর বাকি দুজন হলেন আব্দুস সালাম ও আফসানা শারমিন। শিল্পকলা, আলোকচিত্র ও সংস্কৃতি জগতের অন্যান্য মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ এই বার্ষিক গ্র্যান্ট এ বছরই চালু করা হলো।

শিল্পকর্মের সামনে শিল্পী ও অতিথিরা

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পী রোকেয়া সুলতানা ও আতিয়া ইসলাম এবং উত্তরসূরির প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ। শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘পঞ্চাশ–ষাট দশক আমাদের পূর্ব বাংলার সুবর্ণ যুগ। সে আলোকিত সময়ের দুই তরুণ প্রতিনিধি নূরজাহান ও সারওয়ার মুরশিদ। তাঁদের নামে দুটি গ্র্যান্ট, খান সারওয়ার মুরশিদ গ্র্যান্ট ও নূরজাহান মুরশিদ গবেষণা গ্র্যান্ট এই প্রজন্মের তরুণ মেধাকে উৎসাহিত করবে এবং সৎ, সুন্দর আলোকিত সমাজ গড়তে কিছুটা হলেও এগিয়ে দেবে।’

শারমীন মুরশিদ আরও বলেন, ‘খান সারওয়ার মুরশিদ সারা জীবন শিল্পকলা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন। বহু তরুণ শিল্পীকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করিয়েছেন। নূরজাহান ও সারওয়ার মুরশিদ এবং তাঁদের বাড়িটি যেন সংগীত, সংস্কৃতি ও শিল্পের একটি খোলা জানালা। একটি সামাজিক-রাজনৈতিক অভয়াশ্রম।’

নূরজাহান মুরশিদ ও খান সারওয়ার মুরশিদ, এই আলোকিত মানুষ দুজনের রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অবদানের সাক্ষী হয়ে থাকা এই বাড়ি ১৯৬২ সালে নির্মিত। খ্যাতিমান স্থপতি মাজহারুল ইসলামের প্রথম দিকের গড়া আবাসিক প্রকল্প এটি। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শেষে নূরজাহান মুরশিদ গবেষণা গ্র্যান্ট দেওয়া হবে।