Thank you for trying Sticky AMP!!

বরগুনায় ছাত্রলীগের বিরোধের নেপথ্যে

বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে। গত সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে

বরগুনায় জাতীয় শোক দিবসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এবং পরে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই বিব্রত। এর নেপথ্যে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখাকে দুষলেন জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির নেতারা দাবি করেন, জেলা ছাত্রলীগের শোক শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনাটি পরিকল্পিত। কারণ, জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের পর গত ২৪ জুলাই ৩৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণার পরই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার অনুসারী পদপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এমনকি কয়েক দফা সশস্ত্র হামলাও চালান।

তাঁদের দাবি, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জেলা ছাত্রলীগের শোভাযাত্রায় হামলাটি ছিল পরিকল্পিত। তাঁরা যুক্তি দিয়ে বলেন, শিল্পকলা একাডেমিতে শোক দিবসের আলোচনা সভাটি ছিল জেলা প্রশাসনের। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সভাস্থলে হামলাকারী ওই ব্যক্তিরা কেন গিয়েছিলেন। কেন তাঁরা আগে থেকে মিলনায়তনের দোতলায় ভাঙা ইটের টুকরা স্তূপ করে রেখেছিলেন। একই সঙ্গে মিলনায়তনের পাশের ময়লার স্তূপে টেঁটা, বগি দাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র মজুত রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও ওই দিন বড় ধরনের সংঘাতের খবর ছিল। এ জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেভাগে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনাকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বরগুনা জেলার মানচিত্র

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আমরা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়েছি। আমরা কোনো প্রকার সংঘাত ছাড়া যাতে শোক শোভাযাত্রা ও শ্রদ্ধা জানাতে পারি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের কমিটি দিয়েছে, সেখানে আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে পারব না, এটা কীভাবে হয়! আমাদের অপরাধ কী? কেন আমাদের ওপর বারবার হামলা করা হচ্ছে?’

জাতীয় শোক দিবসে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ব্যাপারে আগেভাগেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন বলে দাবি করলেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব মৃধা।

কমিটি প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের

বরগুনায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই পদে প্রায় ৩০ বছর ধরে আছেন সভাপতি ও সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির। দীর্ঘদিন দলীয় পদে থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে অস্বস্তি ও চাপা ক্ষোভ দীর্ঘদিনের।

দলীয় সূত্র জানায়, এই দুই নেতা দীর্ঘদিন শীর্ষ দুই পদে থাকায় দলের অন্যান্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনেও তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও অনুগত ব্যক্তিদের বসাতে মরিয়া থাকেন সব সময়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের অন্তত সাত নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে এবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যাঁদের নাম প্রস্তাব করেছিলেন, মূলত তাঁরা আসতে না পারায় নতুন এ কমিটির বিরোধিতা করছেন তাঁরা।

Also Read: বরগুনায় শোক দিবসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠিপেটা

এসব নেতারা উদাহরণ টেনে বলেন, ২০১৪ সালে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে তানভীর হোসাইনকে সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে জুবায়ের আদনানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দিয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু জুবায়ের আদনান সভাপতি পদপ্রত্যাশী থাকায় তিনি ওই পদ নিতে রাজি হননি। এরপর তাঁকে সভাপতি পদ দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ হয় এবং বিক্ষোভ থেকে শহরে হামলা-ভাঙচুর হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত বাতিল করে জুবায়েরকে সভাপতি ও তানভীরকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এর আগে ২০১০ সালে ইমরান হোসেন ফরাজীকে সভাপতি ও আক্তারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলনে জাহাঙ্গীর কবিরের বড় ছেলে রুবায়েদ আদনান সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তা না পাওয়ায় ঘোষিত ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করা হয়। এ কমিটির সাধারণ সম্পাদ আক্তারুজ্জামানকে শিবির অ্যাখ্যা দিয়ে পুরো মেয়াদে তাঁকে দায়িত্বপালন করতে দেওয়া হয়নি।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটি মিটিংয়ে (বৈঠকে) আছি। এসব বিষয় নিয়ে এখন কথা বলা যাবে না।’

দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে অনেক দিন ধরে একধরনের সাংগঠনিক স্থবিরতা চলছে। যে কারণে দলের অধিকাংশ নেতাই হতাশ। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ বেশ কয়েক বছর আগে শেষ হয়ে গেলেও কয়েকবার কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেও তা করতে পারেননি।

Also Read: ছাত্রলীগের সংঘর্ষকালে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

সার্বিক বিষয়ে জানতে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর মুঠোফোনে চারবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে সোমবার রাতে শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘সদ্য ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটি আমাদের পরামর্শ ছাড়াই ঘোষণা করে করা হয়েছে এবং সম্মেলনে কাউন্সিল বাধ্যতামূলক। এ কমিটি দেওয়ার আগে সেটাও করা হয়নি। আপনারা জানেন যে ছাত্রলীগ করতে হলে যে পাঁচটি শর্তের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সে শর্তগুলো কমিটি করতে গিয়ে মানা হয়নি। আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবকদের বিষয়টি জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা আসার অপেক্ষা করছি।’