Thank you for trying Sticky AMP!!

‘যুক্তি ও চিন্তা মানুষকে সভ্য করে’

পায়রা উড়িয়ে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধন করছেন অতিথিরা

যুক্তি ও চিন্তা মানুষকে সভ্য ও মানবিক করে তোলে। মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীর পার্থক্য চিন্তা ও চিন্তার বহিঃপ্রকাশেই। তাই যুক্তি দিয়েই বিতর্ক করতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো প্রচলিত ধারণার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া। দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে কেন চার হয়? কেন অন্য সংখ্যা হয় না, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে চোখে দেখা নানা বিষয়ের ওপর।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধনী আয়োজনে এসব কথা বলেন চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী।

চট্টগ্রাম নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সকাল ১০টায় শুরু হয় উদ্বোধনী আয়োজন। তবে সকাল আটটার আগেই একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণে। নগরের ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৮০ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে বিতর্ক উৎসবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অমর্ত্য সেনের লেখা ‘দ্য আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান’ বইটি পড়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে যাবে, তখন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বইটি পড়বে। এটি তোমাদের নতুন করে ভাবাবে। বিকল্প চিন্তা দাঁড় করাতে হবে। নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে, কেন পশ্চিমকে পূর্ব বলা হচ্ছে না।’

আজ নগরের ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৮০ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে বিতর্ক উৎসবে

শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রথম আলোর নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহ জোগান। তিনি বলেন, ভালোর সাথে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার কাজটা সব সময় করে থাকে প্রথম আলো। দেশের শিশু-কিশোর, তরুণ–যুবকদের এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ বিভিন্ন সময়ে নিয়েছে প্রথম আলো। আর এসব কাজে পুষ্টির মতো প্রতিষ্ঠান সব সময় উৎসাহ দিয়ে এসেছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘তোমাদের আছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তোমরা অনেক কিছু করতে চাও। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনেক কিছুই তোমরা পড়তে পারো না। সহশিক্ষা কার্যক্রমও কমে গেছে। তোমাদের এগিয়ে নিতে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব থেকে সম্প্রতি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়েছে। আরও নানা কর্মকাণ্ড হচ্ছে। এসব তোমাদের এগিয়ে নেবে।’  
আলোচনা পর্বে পুষ্টি চট্টগ্রামের বিপণন ব্যবস্থাপক শাহীন আলম প্রথম আলো ও বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পুষ্টি ও প্রথম আলোর সৌজন্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতর্ক উৎসব হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে। তাদের যুক্তিগুলো উপস্থাপনের সুযোগ পাচ্ছে। এ উৎসবের জন্য প্রথম আলো ও বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ দিতে হবে।

শাহীন আলম আরও বলেন, পুষ্টি টি কে গ্রুপের একটি অন্যতম ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের সুনাম দেশের সব জায়গায়। টি কে গ্রুপ চট্টগ্রামেরই একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং দেশের পাঁচটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি। এ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় আর্থসামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। এই ধারাবাহিকতায় পুষ্টি-প্রথম আলো বিতর্ক প্রতিযোগিতা। পুষ্টি সব সময় প্রথম আলোর সঙ্গে ছিল, আছে, থাকবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শাহীন আলম বলেন, ‘তোমাদের মাধ্যমেই একদিন দেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে। তোমরাই একদিন নেতৃত্ব দেবে। ফলে তোমাদের এখন থেকেই গড়ে উঠতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে।’

আলোচনা পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফাহিম উদ্দিন। এ পর্ব শেষে পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন উপাচার্য। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাংয়ের (ইউএসটিসি) শিক্ষক জয়শ্রী দাশ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা সানজিদা, সিলভার বেলস কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিভা ইন্দু।

অনুষ্ঠানে সিআইইউর উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী, পুষ্টির বিপণন ও ব্যবস্থাপক শাহীন আলম, প্রথম আলো যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীসহ অতিথি ও শিক্ষার্থীরা

এর আগে সকাল নয়টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথামালায় অংশ নেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় বিশ্বাস। তিনি বলেন, বিতর্কে যুক্তি থাকতে হবে। শুধু সুন্দর বাচনভঙ্গি দিয়ে বিতর্কে জেতা যাবে না। যুক্তির পিঠে যুক্তি দিতে হবে। প্রতিপক্ষের যুক্তিও খণ্ডন করতে হবে।

আয়োজকেরা জানান, চট্টগ্রামে দুই দিনব্যাপী পুষ্টি-বিতর্ক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রামকে উত্তর ও দক্ষিণ—দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। আজ চট্টগ্রাম উত্তরের ১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আয়োজন বসল। চার ভাগে বিতর্ক হচ্ছে। প্রথম রাউন্ডে ‘মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবার নয়, শিক্ষকদের ভূমিকাই প্রধান’ শীর্ষক বিষয়ে বিতর্ক হবে। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডের বিষয় হলো ‘তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ পাঠাভ্যাস নষ্ট করছে’। সেমিফাইনালে ‘এই সময়ে মেধাবী মানুষের চেয়ে মানবিক মানুষ বেশি দরকার’ ও ‘শিশুদের অনলাইনে নেতিবাচক আচরণের জন্য প্রধানত অভিভাবকই দায়ী’—এ দুই বিষয়ের যেকোনো একটিতে বিতর্ক হবে। এ ছাড়া ফাইনালেও থাকছে দুটি বিষয়—‘পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তির ভূমিকাই প্রধান’ এবং ‘প্রাথমিক পর্যায়েই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়াশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত’।

চট্টগ্রাম উত্তর পর্বে মোট বিচারক ২৩ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির রায়হান আহমেদ চৌধুরী, মারজুক ই ইলাহি, চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটির মেহজাবিন ইসলাম প্রমুখ।  

১৪ জুলাই থেকে পুষ্টির পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর উদ্যোগে খুলনা ও রংপুরে এ স্কুল বিতর্ক উৎসব শুরু হয়। দেশের ৩৯টি অঞ্চলে এ উৎসব হচ্ছে। আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজয়ী ১১ জন ঢাকায় জাতীয় পর্বে অংশ নেবে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সহযোগিতায় এই প্রতিযোগিতার প্রচার সহযোগী নাগরিক টিভি।