Thank you for trying Sticky AMP!!

অতি ওজনের মা, অপুষ্ট সন্তান বেশি

ডিবিএম রয়েছে, দেশে এমন পরিবার ২১ শতাংশ। এসব পরিবারে অতি ওজনের মা ও অপুষ্ট সন্তানের হার বেশি।

মা অতি ওজনে ভুগছেন, শিশুসন্তান ভুগছে অপুষ্টিতে। তার ওজন কম, শরীর শীর্ণ, বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি কম। উল্টো চিত্রও দেখা যায়। মায়ের শীর্ণ শরীর, সন্তান অতি ওজন ও স্থূলতায় ভুগছে।

দেশের অনেক পরিবারে এই দুই ধরনের চিত্র দেখা যায়। পুষ্টিবিদেরা এটিকে ডাবল বারডেন অব ম্যালনিউট্রিশন (অপুষ্টির দ্বিগুণ বোঝা) বা ডিবিএম বলেন। কারণ, অতি ওজন বা অতি শীর্ণ মা ও শিশু একটি পরিবারে দ্বিগুণ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডিবিএম মা ও শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে এমন পরিবারের হার ২১ শতাংশ। এসব পরিবারে অতি ওজনের মা ও অপুষ্ট সন্তানের হার বেশি। ‘ডাবল বারডেন অব ম্যালনিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

একদিকে দেখা যাচ্ছে, মা নিজের কোনো যত্ন নিচ্ছেন না, সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। যত্নের নামে সন্তানকে ফাস্টফুড বেশি খাওয়ানো হচ্ছে। নেই কোনো খেলাধুলার ব্যবস্থা। ফলে সন্তান অতি ওজনের হয়ে যাচ্ছে।
আবদুর রাজ্জাক সরকার, বিআইডিএসের গবেষণা ফেলো ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ

প্রতিবেদনে বলা হয়, অতি ওজনের মা ও খর্বকায় বা কৃশকায় বা কম ওজনের সন্তানের হার ১৩ শতাংশের বেশি। আর কম ওজনের মা ও অতি ওজনের সন্তানের হার প্রায় ৮ শতাংশ।

এই গবেষণায় বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের (বিডিএইচএস) ২০১৭–১৮ সালের সর্বশেষ উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় জরিপ থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত একটি সন্তান রয়েছে, এমন ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৮ হাজার ৬৯৭ মায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই মায়েদের প্রায় ৭৩ শতাংশ গ্রামের। প্রায় ৬৪ শতাংশ মায়ের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক।

মূল গবেষক এবং বিআইডিএসের গবেষণা ফেলো ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ আবদুর রাজ্জাক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, একদিকে দেখা যাচ্ছে, মা নিজের কোনো যত্ন নিচ্ছেন না, সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। যত্নের নামে সন্তানকে ফাস্টফুড বেশি খাওয়ানো হচ্ছে। নেই কোনো খেলাধুলার ব্যবস্থা। ফলে সন্তান অতি ওজনের হয়ে যাচ্ছে।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, এমনও দেখা যাচ্ছে, মা হয়তো কর্মজীবী, তাঁর কায়িক শ্রম কম। তিনি ও তাঁর সন্তানের যত্ন নিচ্ছেন বাড়ির কাজে সহায়তাকারী বা অন্য কেউ। আবার এমন আছে, মা কর্মজীবী নন, কিন্তু শিশুর পুষ্টি কীভাবে নিশ্চিত করতে হবে, সে বিষয়ে তিনি সচেতন নন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মায়ের অতি ওজন আর সন্তানের ওজন কম বা বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি কম। এ রকম নানা ডিবিএম দেখা যাচ্ছে।

মা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, সন্তান অপুষ্ট—এটিও ডিবিএম। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে শহরে উচ্চবিত্ত পরিবারে ডিবিএম বেশি। মায়েদের স্থূলতা বাড়লে তাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাহমিদ আহমেদের, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক

শহরে ডিবিএম বেশি

শহরের উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের এক মা এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের দুই মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের মা বলেন, প্রথম সন্তান জন্মের পরই তিনি মুটিয়ে যান। এরপর আর কমেনি। এখন তাঁর পাঁচ ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। দুটি সন্তানই বয়সের তুলনায় শীর্ণ, দৈহিক বৃদ্ধিও কম।

নিম্ন আয়ের এক স্থূল ওজনের মা বলেন, তিনি বা তাঁর সন্তানেরা কেউ–ই যথাযথ পুষ্টিকর খাবার পান না। তিনি বাসাবাড়ি কাজ করেন। এরপরও তিনি মোটা। তবে তাঁর তিন সন্তানই শীর্ণ। ওজনের কারণে তাঁর বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। ওজন বেশি কেন, জানতে কখনো চিকিৎসকের কাছে যাননি।

ওই মায়ের প্রতিবেশী কম ওজনের এক মা বলেন, তিনি মাসেও একবার ডিম খেতে পান না। তাঁর পাঁচ সন্তানের তিনজন গ্রামে ও দুজন তাঁর সঙ্গে শহরে থাকে। গ্রামের সন্তানেরা বাড়ির মুরগির ডিম নিয়মিত খাওয়ার সুযোগ পেলেও শহরে থাকা সন্তানেরা খুব কমই ডিম খায়।

বিআইডিএসের প্রতিবেদন বলা হয়, অতি ওজনের মা ও অপুষ্ট সন্তান এবং কম ওজনের মা ও অতি ওজনের সন্তানের হার গ্রামের তুলনায় শহরে কিছুটা বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিবিএম বাড়ছে। ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মায়েদের মধ্যে অতি ওজন ও অপুষ্ট সন্তান এবং কম ওজন ও অতি ওজনের সন্তানের হার বেশি। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, এমন মায়েদেরও ডিবিএম বেশি।

স্থূলতা যেভাবে মাপা হয়

উচ্চতা ও ওজনের ওপর দেহের বিএমআই (বডি ম্যাস ইনডেক্স) বা স্থূলতা পরিমাপ করা হয়। বিএমআইয়ের একক কেজি/বর্গমিটার। বাংলাদেশের জন্য বিএমআই ১৮.৫–এর নিচে হলে কম ওজন, ১৮.৫ থেকে ২২.৯ পর্যন্ত স্বাভাবিক ওজন, ২৩ থেকে ২৪.৯ পর্যন্ত বেশি ওজন এবং ২৫–এর বেশি হলে স্থূল ধরা হয়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে

ডিবিএম নিয়ে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, সন্তান অপুষ্ট—এটিও ডিবিএম। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কারণে শহরে উচ্চবিত্ত পরিবারে ডিবিএম বেশি। মায়েদের স্থূলতা বাড়লে তাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এসব সমস্যা দেখা দিলে হৃদ্‌রোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুদের বৃদ্ধি কম হলে মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শহরের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা অনেকে ফাস্ট ফুড বেশি খায়, খেলাধুলা করে কম এবং স্ক্রিনে বেশি সময় দেয়। এতে তাদের ওজন বেড়ে যায়।

তাহমিদ আহমেদ বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শর্করাজাতীয় খাবার, তেলের পরিমাণ কমাতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া বাড়াতে হবে, দিনে অন্তত ৪০০ গ্রাম খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক শ্রম করতে হবে।