Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রলীগের অবরোধে ১১টি পরীক্ষা স্থগিত, হয়নি ক্লাস

৩৫ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার। অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা উপাচার্যের।

রামদায় শাণ দিচ্ছেন মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন ও মিজানুর রহমান খান

কমিটিতে পদ না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অবরোধ ৩৫ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকালও ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এ নিয়ে দুই দিনে ৯টি বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হলো। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর গত রোববার রাত একটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে সংগঠনের উপপক্ষ বিজয়ের একাংশের নেতা-কর্মীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। অবরোধ নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল বেলা ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে বলেন। এর আধা ঘণ্টা পরই অবরোধ তুলে নেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।

অবরোধের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয়ের পদবঞ্চিত নেতা দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যোগ্যরা পদ না পাওয়ার বিষয়টি তাঁদের নেতা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জেনেছেন। এ কারণে অবরোধ স্থগিত করেছেন।

Also Read: রামদা শাণ দেওয়া চবি ছাত্রলীগের সেই দুই কর্মী এখন সহসভাপতি

অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার সাংবাদিকদের বলেন, অবরোধ তুলে নেওয়ায় আজ বুধবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা ও শাটল ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলবে। অবরোধে কারা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দু-এক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

ছাত্রলীগের আবরোধের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। কারণ, তাঁরা শাটল ট্রেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাস চলাচল আটকে দেন।
নাজনীন নাহার ইসলাম, জিন ও প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি

৯ বিভাগে স্থগিত পরীক্ষা

ছাত্রলীগের অবরোধে ৯টি বিভাগের প্রায় সাড়ে ৭০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারেননি। বিভিন্ন বর্ষের ১১টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভাগগুলো হলো ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস, ফাইন্যান্স বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ, সংস্কৃত বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ। এসব পরীক্ষার সূচি পুনরায় তৈরি করতে এক থেকে দুই সপ্তাহ লেগে যায়।

অবরোধের কারণে পরীক্ষা হবে কি হবে না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কেটেছে শিক্ষার্থীদের। এসব বিভাগের ৯ শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, আগের দিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সকালে উঠে জানেন পরীক্ষা হবে না। করোনার কারণে এমনিতেই সেশনজটে পড়েছেন তাঁরা। এখন ছাত্রলীগের কারণে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ক্ষতির দায় কে নেবে?

জিন ও প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি নাজনীন নাহার ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের আবরোধের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। কারণ, তাঁরা শাটল ট্রেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাস চলাচল আটকে দেন।

Also Read: ১০ ঘণ্টা পর চবি ছাত্রলীগের অবরোধ স্থগিত

ছাত্রলীগ নিজেদের বিরোধে অবরোধ ডেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলার সমালোচনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নিজেদের ঝামেলার জন্য বারবার ক্যাম্পাস অবরোধ করে। কিন্তু প্রশাসন কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। এমন অরাজকতা থেকে মুক্তি পেতে চান শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের পদ নিয়ে কারও দাবি থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কথা বলতে পারেন। সেটি না করে অবরোধের ডাক দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রেজাউল হক, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি

রামদা শাণ দেওয়া সেই দুজন সহসভাপতি

২০১৫ সালের ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর পক্ষের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় তোলা একটি ছবি ৩ নভেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। ছবিতে শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দিতে দেখা যায় দুই কর্মীকে।

ওই দুই ছাত্রলীগ কর্মীর একজন ছিলেন মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন। তিনি ক্যাম্পাসে টাইগার মোফা নামে পরিচিত। আরেকজন ছিলেন মিজানুর রহমান খান। তিনি শ্রাবণ মিজান নামে পরিচিত। তাঁরা দুজনই এবারের কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন। তাঁদের পদ পাওয়ার খবর জানাজানি হলে প্রথম আলোর সেই ছবি আবার আলোচনায় এসেছে। অনেকেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘পদ পাওয়ার জন্য রামদা শাণ দেওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।’

কমিটির বিরোধে আরও ৭ বার অবরোধ

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতা রেজাউল হককে সভাপতি ও সিক্সটি নাইনের নেতা ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য দুই সদস্যের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এরপর থেকে সর্বশেষটি ছাড়া কমিটির বিরোধ ও নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ছাত্রলীগের তিনটি উপপক্ষ—বিজয়, সিএফসি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস গত তিন বছরে আরও সাতবার অবরোধের ডাক দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে উপপক্ষ বিজয় ও সিএফসি তিনবার, ২০২০ সালে বিজয় একবার ও চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বিজয়, ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও সিএফসি তিনবার ক্যাম্পাস অবরোধ করে। এসব অবরোধ চলে এক থেকে দুই দিন। প্রতিবারই বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ক্লাস-পরীক্ষাও হয়নি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের পদ নিয়ে কারও দাবি থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কথা বলতে পারেন। সেটি না করে অবরোধের ডাক দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। তাদের একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরীর এবং আরেকটি পক্ষ সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ছাত্রলীগের এ দুই পক্ষের মধ্যে রয়েছে ১১টি উপপক্ষও। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) মহিবুলের, বাকি ৯টি উপপক্ষ নাছিরের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

জানতে চাইলে মহিবুল হাসান চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রক নন। তাঁর নামে কোনো পক্ষ হোক, সেটা চান না। সেটা কাম্যও নয়। এগুলো সরাসরি অপরাধমূলক কাজ।

বক্তব্য জানতে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। তবে বিভিন্ন সময় তিনি বলে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরও কোনো অনুসারী নেই।

ছাত্রলীগের কমিটির পদবঞ্চিতদের জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে, তা হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, সামনে যাতে এ ঘটনা না ঘটে, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।