Thank you for trying Sticky AMP!!

ছবি তুলে কৃতী শিক্ষার্থীদের আনন্দটা আরও বাড়িয়ে দিলেন অভিনয়শিল্পী আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে

স্বপ্নের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে

কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি বাধা পার হয়েছ। পরবর্তী জীবনেও এই সফলতা ধরে রাখতে হবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না। এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতে হবে। সে স্বপ্নের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে অন্যদের মধ্যেও। সফল হওয়ার জন্য জানার পরিধি বিস্তৃত করতে বই পড়তে হবে।

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এই পরামর্শ দেন। প্রথম আলো এই আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেছে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায়। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম পর্ব দিয়ে এই বছরের কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা আয়োজন শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে বাকি ৬৩টি জেলায় এই উৎসব হবে।

অনুষ্ঠানে মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে না বলেছে শিক্ষার্থীরা। ভালো ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে দেশকে সমৃদ্ধ করারও সংকল্প করেছে তারা।

এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।

দুই পাশে সারি সারি পাহাড়, মাঝে ছবির মতো হ্রদ। পার্কজুড়ে বিনোদনের নানা উপকরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এমন পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয় কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা। হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে ফয়’স কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। অভিভাবকদের সমাগমে পরিবেশ ছিল প্রাণবন্ত। শিক্ষার্থীদের কেউ দল বেঁধে গান গেয়েছে, কেউ সেলফি তুলেছে। আবার অনেকে লাইন ধরে রাইডে চড়েছে।

উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশপথের পাশের খোলা জায়গায় এক সারি বুথ। সেখানে ছিল প্রথম আলো, প্রথম আলো বন্ধুসভা, চরকি, শিখো, বিকাশ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথ। এসব বুথে অভিভাবকদের নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ঢুঁ দিয়েছে।

সকাল ৯টায় ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে একে একে প্রবেশ করে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা। কেউ এসেছে মায়ের হাত ধরে, আবার কেউ ছোট ভাই বা বোনকে নিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে যেন এক মিলনমেলা।

শিক্ষার্থীরা পার্কে ঢুকতেই ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের সকালের নীরব-নিভৃত পরিবেশ যেন মুহূর্তে পাল্টে গেল। উচ্ছ্বাসের ঢেউ খেলে গেল চারদিকে। একে অপরকে কাছে পেয়ে সহপাঠী-বন্ধুদের যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। এই উৎসবের ক্ষণ একসঙ্গে উপভোগ করার বিরল মুহূর্ত মুঠোফোনের ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা গেল অনেককে।

এসবের ভিড়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। মাশরুরল কবির, আসাদুল্লাহ আল মাহের, আহসানুল আবেদীন এবার বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে।

তারা প্রথম আলোকে বলে, স্কুলের বন্ধুরা সবাই একেক জায়গায় ভর্তি হয়েছে। সবাই ছড়িয়ে গেছে। উৎসব উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন পর আবার দেখা হলো। এখানে এসে দারুণ লাগছে।

মেয়ে আফসানা জেরিনকে নিয়ে এসেছেন বাবা বুলবুল হাসান। পেশায় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা। চট্টগ্রামেই কর্মরত। মেয়ের ইচ্ছা চিকিৎসক হবে। বুলবুল হাসান বলেন, মেয়ে পরিশ্রম করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর মেয়েকে সংবর্ধনা দিচ্ছে প্রথম আলো। বিষয়টি তাঁকে বেশ আনন্দ দিচ্ছে।

‘না বলা শিখতে হবে’

উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুপুরের খাবারের পরেই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই পর্ব শুরু হয়। শুরুতেই মঞ্চে আসেন উপস্থাপিকা মৌসুমী মৌ।

আলোচনা পর্বে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে মঞ্চে আসেন কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি শিক্ষার্থীদের বিখ্যাত মনীষীদের জীবনের গল্প শোনান। বলেন, জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে হবে শিল্প, সাহিত্য, সংগীত। এ কথা হৃদয়ে প্রোথিত করে নিতে হবে। সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই বই পড়তে হবে। আর ‘না’ বলতে শিখতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক আদনান মান্নান। তিনি বলেন, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, দেশের জন্য ভাবতে হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের প্রধান ফারহানা আক্তার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি সময় দেওয়া যাবে না। সবকিছুতে ভারসাম্য রাখতে হবে।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাইডে চড়ে আনন্দে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে

আলোচনার ফাঁকে চলে তারকাদের কথোপকথন। প্রিয় তারকা আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরীকে কাছে পেয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল শিক্ষার্থীদের। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সুড়ঙ্গ সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফি।

উৎসবে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই উৎসবের স্মৃতি এবং সংবর্ধনা পাওয়ার মুহূর্ত তোমাদের হৃদয়ে আজীবন থেকে যাবে।’

পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ‘শিখো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীর চৌধুরী বলেন, ‘সব সময় শেখার মধ্যে থাকতে হবে। কারণ, শিখলেই জিতবে। তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে। তোমাদের হাত ধরে বাংলাদেশ আরও উজ্জ্বল হবে।’

বিকাশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ কবির বলেন, মেধা ও প্রযুক্তি একসঙ্গে যুক্ত হলে শিক্ষার্থীদের বিকাশ ঠেকানো যাবে না। নিজেদের গড়ে তোলার এখনই সময়।

কনকর্ড গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা অনুপ কুমার সরকার শিক্ষার্থীদের মা-বাবার কথা শোনার পরামর্শ দেন।

কৃতী শিক্ষার্থীদের দেশের ভবিষ্যৎ বলে মন্তব্য করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পরিচালক (পাবলিক রিলেশন ও আউটরিচ) অসিম ভাটনাগার। আরও বক্তব্য দেন মেঘনা গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাদমান শারিয়ার বিশ্বাস ও চরকির ক্রিয়েটিভ লিড জাহিদুল হক। গান গেয়ে শোনায় কৃতী শিক্ষার্থী অদিতি ভট্টাচার্য। অনুভূতি প্রকাশ করে আরেক কৃতী শিক্ষার্থী খাদিজাতুল। শেষে গান পরিবেশন করে ব্যান্ড দল বে অব বেঙ্গল।