Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতিবেদন নয়, শিশু নির্যাতনের জন্য শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লক্ষ করা যাচ্ছে, সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের কারণ নিয়ে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, ‘বাংলাদেশে জীবনযাপনের ব্যয়’ নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবৃতিতে এ তথ্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে বলা হয়, ‘শিশু নির্যাতন’ ও ‘শিশুকে নিজের স্বার্থে’ ব্যবহারের অভিযোগে শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে বৈশ্বিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খরচ বেড়েছে। এ নিয়ে অনেক গণমাধ্যমই ক্রমাগত প্রতিবেদন করে যাচ্ছে। তবে এ ধরনের প্রতিবেদনের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ওই সাংবাদিককে (শামসুজ্জামান) শিশু নির্যাতন ও শিশুকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ওই সাংবাদিক ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে ১০ টাকা দিয়েছিলেন এবং ওই শিশুর নাম দিয়ে নিজের কথাগুলো লিখেছেন। এটি নিশ্চিতভাবেই শিশুর বিরুদ্ধে শোষণ ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড। দ্বিতীয়ত, তিনি মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন। এসব কর্মকাণ্ড নিশ্চিতভাবেই শাস্তিমূলক অপরাধ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সব নাগরিক ও গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তবে এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সৎ সাংবাদিকতার চেতনাবিরোধী। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) সমর্থনকারী হিসেবে বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের শিশু নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না। দেশের স্বাধীনতা দিবসকে অবমাননা করার এমন প্রচেষ্টাও সরকার মেনে নেবে না।

গত বুধবার ভোর চারটার দিকে সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না শামসুজ্জামানের। তিনি প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে সাভারে কর্মরত। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয় এবং রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Also Read: সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে কাশিমপুর থেকে আবার আনা হলো ঢাকার কারাগারে

২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের এক প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘ফটো কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি ছিল একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতিটি নজরে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি সংশোধন দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর। বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।

গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো ফেসবুকের ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা প্রথম আলোর সমালোচনা করে আসছেন। একই সঙ্গে দলটির অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দুটি হয়। মামলা দুটির মধ্যে প্রথমটির বাদী ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ গোলাম মো. কিবরিয়া। অপরটির বাদী আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক), যিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভার) শামসুজ্জামানকে তেজগাঁও থানার মামলা নয়, রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এই মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।

Also Read: ‘ভাত না জোটার’ বক্তব্য প্রকাশ করে সাংবাদিক কারাগারে

প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) বিভিন্ন মানবাধিকার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে নানা ধরনের হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। এখনো তাঁর বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা রয়েছে।