Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের ছুটিতেও গ্রামে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা

  • দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট।

  • সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বড় ছুটির সময় বিদ্যুতের চাহিদা কমে। চাহিদা কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে তেমন ঘাটতি থাকে না। তবে এখন ছুটির দিনেও ঘাটতি থাকছে।

সাপ্তাহিক ছুটি ও পবিত্র শবে কদর মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি ছিল গত শুক্রবার থেকে রোববার। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষ দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে ছিলেন। ফলে ঈদের ছুটিতেও লোডশেডিংয়ের শঙ্কায় রয়েছেন গ্রামের মানুষ।

বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র বলছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। ৪ দিন ধরে উৎপাদিত হচ্ছে ১১ হাজার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। চাহিদা থাকছে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার। ফলে লোডশেডিং থাকছেই। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে শনিবার মধ্যরাতে।

শহরে লোডশেডিং কম। ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে ভোগান্তিতে মানুষ।

অবশ্য দুই দিন ধরে তাপমাত্রা কিছুটা কম। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমায় লোডশেডিং কিছুটা কমেছে। তবু গতকাল সোমবার দিনের বেলায়ও ঘণ্টায় ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।

ঈদের ছুটির শেষ দিকে গরম বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। তবে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধ ও জ্বালানি কিনতে ডলার ও টাকার ঘাটতিতে আছে বিদ্যুৎ বিভাগ। জরুরি ভিত্তিতে ডলার ও ভর্তুকির টাকা ছাড় করতে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করেছে তারা।

ঢাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকায় লোডশেডিং নেই বলে জানিয়েছে দুই বিতরণকারী সংস্থা ডেসকো ও ডিপিডিসি। কারিগরি কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হচ্ছে। ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় লোডশেডিং তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা পিডিবি, নেসকো এবং ওজোপাডিকো।

দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তাদের চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। কয়লা থেকে প্রায় পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন করা হচ্ছে।

পিডিবির সদস্য খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল চালু হতে পারে। এতে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহ বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাবে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময় বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে।

বিদ্যুৎ খাতে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট।

গ্রামাঞ্চলে থামছে না লোডশেডিং

গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ময়মনসিংহের গ্রামগুলোতে দিনে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩–এর মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ২৪ শতাংশ লোডশেডিং ছিল। ঈদের ছুটির সময় গরম বেশি থাকলে লোডশেডিং হতে পারে। আর ময়মনসিংহ পিডিবি বলছে, চাহিদা ২৭৮ মেগাওয়াট, পাওয়া গেছে ২৩৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ৪৫ মেগাওয়াট।

লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে নান্দাইলে গতকাল মানববন্ধন হয়েছে। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক বিপ্লব চন্দ্র সরকার বলেন, চাহিদা ৩৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ মেগাওয়াট।

লোডশেডিংয়ের ব্যাপক ভোগান্তিতে রয়েছেন সুনামগঞ্জ, কুমিল্লার ১৩টি উপজেলা এবং যশোরের বাসিন্দারাও।

নওগাঁয় এক সপ্তাহ ধরে গ্রামাঞ্চলে দিন-রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। শহরাঞ্চলেও লোডশেডিং হচ্ছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। জেলার ধামইরহাট পৌরসভার টিঅ্যান্ডটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, দিন-রাত মিলিয়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর আওতায় থাকা এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর উপমহাব্যবস্থাপক রাজ্জাকুর রহমান বলেন, কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

লোডশেডিংয়ের ব্যাপক ভোগান্তিতে রয়েছেন সুনামগঞ্জ, কুমিল্লার ১৩টি উপজেলা এবং যশোরের বাসিন্দারাও।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বলারামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ঈদ উপলক্ষে বউ–সন্তান নিয়ে গ্রামে এসেছেন। বেড়াতে এসে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়ছেন।

[প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা]