Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মা সেতুকে ঘিরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ে উদ্বেগ রেহমান সোবহানের

গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের অলোকি সেন্টারে ‘দ্য গ্রেট পদ্মা: দ্য এপিক রিভার দ্যাট মেক দ্য বেঙ্গল ডেলটা’ বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা

পদ্মা সেতুর ফলে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সড়ক অবকাঠামোর দুপাশে কৃষিজমি ধ্বংস করে যে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সতর্ক হতে হবে। কারণ পরিবেশগতভাবে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের সমাজ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হবে, যা চিরায়ত গ্রামীণ অর্থনীতির পরিপন্থী।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের অলোকি সেন্টারে ‘দ্য গ্রেট পদ্মা: দ্য এপিক রিভার দ্যাট মেক দ্য বেঙ্গল ডেলটা’ বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এসব কথা বলেন। বইটি সম্পাদনা করেছেন বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কাজী খালিদ আশরাফ। বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার ও ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টসের উদ্যোগে ওআরও এডিশন (যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো) থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আইএফআইসি ব্যাংক।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে ঘিরে বড় ধরনের সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু কেরানীগঞ্জ পার হওয়ার পর ডেভেলপারদের সাইনবোর্ড দেখি। যখন পুরোটা জায়গাজুড়ে উন্নয়ন হয়ে যাবে, ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত নগর হয়ে যাবে। পদ্মার ওপারের বড় ধরনের উন্নয়নকাজ চলবে। এর যে পরিণতি হবে, তখন পদ্মা পর্যন্ত কোনো কৃষিজমি থাকবে না। কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক সমাজে এখন নতুন ধরনের অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের পুনরায় ভাবতে হবে। কারণ, এটা হবে ভিন্ন ধরনের সমাজ ও ভিন্ন ধরনের অর্থনীতি।’

রেহমান সোবহান বলেন, ‘এসব বলছি, কারণ হলো বইয়ে পদ্মার যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা যেন অতীত না হয়ে যায়। আমাদের স্বীকার করতে হবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য, যা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নকশার ক্ষেত্রে।’

পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু সেতু অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে কীভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ। রেহমান সোবহান বলেন, ‘না হলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের এই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।’

রেহমান সোবহান বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের মাধ্যমেই শুধু উন্নয়ন হয় না। আমাদের উন্নয়নের কেন্দ্রে রয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রামীণ সমাজ আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ গঠন করে, যা গ্রামীণ অর্থনৈতিক সমাজকে সহযোগিতা করে। এখন কীভাবে গ্রামীণ এলাকা ও ভূমি সংরক্ষণ করা যায় এবং তা সম্প্রসারণ করা যায় তা ভাবতে হবে।’

গ্রামীণ অর্থনীতিতে ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, ‘যা আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। কারণ পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু সেতুর ফলে এখন সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। সারা দেশেই নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। পরিকল্পিত ও যথাযথ সহযোগিতার মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করে এ সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বইটির সম্পাদক অধ্যাপক কাজী খালিদ আশরাফ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিল্পী ও গণমাধ্যমকর্মী নবনীতা চৌধুরী।