Thank you for trying Sticky AMP!!

চালক সংকেত অমান্য করায় কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনা

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে দুর্ঘটনাকবলিত দুটি ট্রেনের বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধারের কাজ চলছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে তোলা

যাত্রীবাহী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক সংকেত অমান্য করে ট্রেনটি চালিয়ে যাওয়ায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশনে গতকাল রোববার রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। চালক সংকেত মেনে স্টেশনের প্রবেশের আগেই ট্রেন থামালে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

এ দুর্ঘটনায় সোনার বাংলা ট্রেনের সাতটি বগি ও ইঞ্জিন এবং থেমে থাকা মালবাহী ট্রেনের দুটি কনটেইনার ও গার্ডরুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রেনের বগি দুমড়েমুচড়ে পাশের জমিতে পড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রেললাইনও। যাত্রীবাহী ট্রেনের অন্তত ৫০ যাত্রী আহত হলেও কোনো প্রাণহানি না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

ওই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনার এ কারণ পাওয়া যায়। এদিকে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে ইতিমধ্যে ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার) মো. জসিম উদ্দিন, সহকারী ট্রেনচালক মো. মহসীন, গার্ড আবদুল কাদের ও সিগন্যাল মেইনটেইনার আবদুল ওয়াহেদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজ সোমবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন যখন হাসানপুর স্টেশন এলাকায় পৌঁছায়, তখন তা মূল লাইন দিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। মূল লাইন প্রস্তুত করতে সময় দরকার ছিল। তাই ট্রেন থামার সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু চালক ট্রেন চালিয়ে যান এবং লুপ লাইনে থাকা ট্রেনকে ধাক্কা দেন। সংকেত অমান্যর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। গাফিলতির কারণে চালকসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে বিস্তারিত কারণ বের হয়ে আসবে।

এদিকে দুর্ঘটনাটি নিয়ে রেলওয়ের একটি তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসানপুর স্টেশনের প্যানেল বোর্ড রোববার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর দুই মিনিট আগে চট্টগ্রাম থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রেন স্টেশনটিতে প্রবেশ করে। সেটি স্টেশনের লুপ লাইনে রাখা হয়। প্যানেল বোর্ড অকার্যকর থাকায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সংকেত অমান্য করে স্টেশনে ঢুকে পণ্যবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্যানেল বোর্ড সচল থাকলে এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন কোন লাইনে প্রবেশ করবে, কোন লাইন দিয়ে স্টেশন পার হবে, তার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংকেতও প্রদর্শন করা হয়। আর কোনো কারণে প্যানেল বোর্ড অকার্যকর হয়ে পড়লে সংকেতব্যবস্থা ডার্ক বা লাল হয়ে যায়। তখন ট্রেনচালক বুঝতে পারেন এ স্টেশনে কোনো সমস্যা হয়েছে বা এই স্টেশন দিয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে না। সে সময় পয়েন্টসম্যান নিজেই লাইন প্রস্তুত করেন এবং কোন লাইন দিয়ে ট্রেন যাবে, সে বিষয়ে স্টেশনমাস্টারের দেওয়া নির্দেশনামূলক কাগজ চালকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রেলওয়ের দুজন কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনার দিন হাসানপুর স্টেশন এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। এতে প্যানেল বোর্ডের ব্যাকআপ ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে বোর্ড। এ অবস্থায় ম্যানুয়াল সংকেতব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু ট্রেনচালক তা নজরে আনেননি।

এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া চারজনের মধ্যে একজন হচ্ছেন সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের কর্মী সিগন্যাল মেইনটেইনার আবদুল ওয়াহেদ। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে হাসানপুর স্টেশনের প্যানেল বোর্ড অকার্যকর হয়ে পড়ে। ব্যাকআপ ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যায়। যদি জেনারেটর চালু থাকত তাহলেও প্যানেল বোর্ড কার্যকর থাকত। কিন্তু সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বরত কর্মী বিকেল পাঁচটার পর অফিসে ছিলেন না। এতে জেনারেটর চালুর জন্য লোকবল ছিল না।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, স্টেশনের একমাত্র পয়েন্টসম্যান সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার জন্য লাইন প্রস্তুত করছিলেন। এই কাজ করতে অন্তত ১০-১৫ মিনিট লাগে। এ পরিস্থিতিতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসকে স্টেশনের প্রবেশের আগে অন্তত ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা দরকার ছিল। কিন্তু ট্রেনচালক এক মুহূর্তের জন্যও অপেক্ষা করেননি। আবার স্টেশন এলাকা পার হওয়ার সময় ট্রেনের গতি (সচরাচর ১৬ কিলোমিটার) কমাতে হয়। কিন্তু স্টেশনে প্রবেশের সময় ট্রেনটির গতি ছিল প্রায় ৮০ কিলোমিটার। চালক যদি গতি কমাতেন, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।

সরেজমিনে আজ দেখা গেছে, সোনার বাংলা ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত বগি রেললাইন উপড়ে পশ্চিম পাশের খেতে পড়ে আছে। ইঞ্জিন আর দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ছয়টি বগি এলোমেলো পড়ে আছে। দুটি বগি রেললাইনে আছে। মালবাহী ট্রেনের গার্ডরুম, দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল রাত ১টা ২০ মিনিটে লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসে। লাকসাম রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোলায়মান বলেন, ‘মালবাহী ট্রেনের কনটেইনার সরাচ্ছি আমরা।’

আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে। আখাউড়ার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মনির উদ্দিন বলেন, ‘এখন আমরা বগি সরাচ্ছি সোনার বাংলা ট্রেনের। রেললাইন মেরামত করছি।’

দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত নয়টার দিকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক

Also Read: ‘সিগন্যাল বিভ্রান্তি’ বলছেন স্টেশনমাস্টার, তদন্ত কমিটি রেলের