Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলে সাজ্জাদকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মোহাম্মদ গাজু মিয়া। আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত কবির গ্রুপের অফিস সামনে

‘আম্মু, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন’

‘আম্মু, ওরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। এখনো ইফতার করি নাই। তারা খাবার দিলে ইফতার করব। কবির গ্রুপের চাচার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেভাবেই হোক, আমাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন, আম্মু।’

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার রাত আটটায় সর্বশেষ মুঠোফোনে মা জোছনা বেগমকে এই আকুতি জানিয়েছেন। এরপর আজ বুধবার পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।

ছেলের চিন্তায় জোছনা বেগম আজ বুধবার সকালে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। এ সময় কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। ছেলের চিন্তায় উৎকণ্ঠায় থাকা এই মা বারবার আকুতি জানাচ্ছেন—যেভাবেই হোক তার ছেলেকে যেন ফিরিয়ে আনা হয়।

ছেলের সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য তুলে ধরে জোছনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল কেড়ে নেওয়ার আগে ছেলের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয়। জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। তবে তারা কারও গায়ে হাত তোলেনি। জাহাজে পানির পরিমাণ কম। নাবিকদের জন্য দোয়া করতে বলেছে।

জোছনা বেগমের মতো আজ বুধবার সকাল থেকে একে একে জিম্মি জাহাজের নাবিকদের স্বজনেরা কবির গ্রুপের কার্যালয়ে ছুটে আসেন। সেখানে কথা হয় কোনো নাবিকের স্ত্রী, ভাই কিংবা স্বজনের সঙ্গে।

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।

জাহাজে জিম্মি নাবিক নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসও কবির গ্রুপের কার্যালয়ে ছুটে আসেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার লিচুতলার বাড়িতে আড়াই বছরের সন্তানকে রেখে স্বামীর খোঁজ নিতে আসেন তিনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় নুরউদ্দিনের সঙ্গে। তখন জানিয়েছিলেন তাঁদের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। জাহাজে তখন ৫০ জনের মতো জলদস্যু ছিল। সবার হাতে ছিল অস্ত্রশস্ত্র। পরে একটি অডিও বার্তা পাঠায় তাঁর মুঠোফোনে। নুরউদ্দিনের অডিও বার্তায় শোনা যায়, ‘ফাইনাল কথা, এখানে টাকা না দিলে একজন একজন করে মেরে ফেলবে বলছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টাকাপয়সা, চাকরি কিচ্ছু চাই না। সরকারের কাছে আবেদন, যেন সবাইকে সুস্থভাবে ফেরত দেওয়া হয়। আমরা তাদের সুস্থভাবে ফেরত চাই।’

জিম্মি জাহাজের নাবিক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ভাইয়ের খোঁজ নিতে ছুটে আসেন বড় ভাই দিদারুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। মঙ্গলবার মুঠোফোনে কথা হলে শুধু টেনশন না করতে বলেছেন।

নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম এক সন্তানকে নিয়ে আজ বুধবার সকালে ছুটে এসেছেন কবির গ্রুপের কার্যালয়ে। আইনুল হকের মায়ের আকুতি, ‘যেভাবেই হোক আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।’

মঙ্গলবার দুপুরে জাহাজটি জিম্মি করার পর এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি জাহাজের মালিকপক্ষের। কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা সুস্থ আছেন। নিরাপদ আছেন। জাহাজ এখন সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাচ্ছে। পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দস্যুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়ার পর তাদের দাবি আমাদের কাছে জানাবে। এখন পর্যন্ত যোগাযোগ হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের পাশে আছি। আগেও আমাদের একটি জাহাজ জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। ১০০ দিন পর অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি। এটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’