Thank you for trying Sticky AMP!!

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য সরকারের দুটি প্রস্তাব

প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

 মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রথম প্রস্তাব হলো রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহন করা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আরও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম’বিষয়ক সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। সভায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ও মানবিক কার্যক্রম বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

ব্রিফিংয়ের আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১৭ প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত প্রমুখ।

প্রথম প্রস্তাব প্রসঙ্গে মুখ্য সচিব বলেন, ‘সরকার ভাসানচরে এক লাখ লোকের বসবাসের জন্য আবাসন তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে সেখানে ৩০ হাজার জনকে নেওয়া হয়েছে। আরও ৭০ হাজার লোক সেখানে নিতে চাই। এই স্থানান্তর ব্যয়বহুল বিষয়। আমরা আশা করছি, বন্ধুরাষ্ট্র যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে, তারা এই লোকদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে নেওয়ার খরচ বহন করবে। প্রধানমন্ত্রী এটি সিরিয়াসলি চাইছেন।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘ভাসানচরে যে জমি আছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ আমরা ব্যবহার করেছি। বাকি দুই ভাগ জায়গাতেও প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন, অবকাঠামো নির্মিত হোক এবং আরও রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়া হোক। বাংলাদেশ সেখানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণে (বিদেশি বন্ধুদের কাছে) সহায়তা চেয়েছে।’ বৈঠকে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ঘনবসতি ও তাদের মানবেতর জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অবস্থানের কারণে সেখানে বেশ কিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে, নিজেদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, পাচার ও নিজেদের বিরোধের কারণে জিম্মি করার ঘটনা ঘটছে। এর একটা সামাজিক কুফল আছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘এসব কারণে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি, যত দ্রুততম সময়ে আমরা যত বেশি লোককে ভাসানচরে নিয়ে যাব, ততই তাদের নিরাপত্তা বাড়বে। তেমনি তাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠা ভালো হবে।’  

Also Read: রোহিঙ্গাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের আয়োজন

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে মানবিক সহায়তা পাচ্ছি। ২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও  বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর কাছে আমাদের দিক থেকে চাওয়া ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার ৬২ শতাংশ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা যে বৈদেশিক সহায়তা চাই, সেটি আমরা পাইনি। আমরা এ সহায়তা আরও বাড়াতে বলেছি।’

অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসডুপুয়, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিনডে, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস, ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যানডার ক্লাউ, ডব্লিউএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ডম স্কালপেলি, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুজান মুলার, জাপানি মিশনের উপপ্রধান মাচিদা তাতসুয়া, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের উপপ্রধান থিজ ওয়াউডস্ট্রা, তুরস্ক দূতাবাসের ডেপুটি চিফ বাতুহান গুরহান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার প্রধান এবং হোস্ট কমিউনিটিস প্রোগ্রাম অব কানাডিয়ান হাইকমিশন বিবেক প্রকাশ এবং মার্কিন দূতাবাসের আঞ্চলিক উদ্বাস্তু সমন্বয়কারী ম্যাকেঞ্জি রোও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Also Read: ভাসানচর ঘুরে গেলেন ১০ দেশের কূটনীতিকেরা