Thank you for trying Sticky AMP!!

বইমেলায় বাড়তি দিনে বিক্রি তেমন নয় 

বাঙালির ইতিহাস চর্চার পথের কাঁটা ফয়েজ আলম ঘাসফুল

মেয়াদ বেড়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনও ছিল, কিন্তু প্রকাশকদের প্রত্যাশিত বেচাকেনা হলো না একুশের বইমেলার বাড়তি দিনে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকেই মেলা শুরু হয়েছিল। দিনের প্রথম ভাগে লোকসমাগম ছিল নগণ্য। অপরাহ্ণে লোকসমাগম বাড়লেও ফেব্রুয়ারির ছুটির দিনগুলোতে যেমন আবহ থাকে, তেমন পরিবেশ ফেরেনি এই বাড়তি দিনে। বিক্রিও যে খুব ভালো হয়েছে, এমন নয়। 

ভাষার মাসের সঙ্গে মেলার যে আবেগ, মার্চে এসে তার সঙ্গে যেন মন মেলেনি অনেকের। তাই ছুটির দিনেও বেশ নিরালা পরিবেশ। আজ শনিবারও হয়তো এমনই থাকবে, সে কারণে যাঁরা দেখে–বুঝে ভালো বই কিনতে চান, তাঁরা মেলায় আসতে পারেন। 

পূর্ববঙ্গের জমিদারবাড়ি মো. মাহমুদ আলী দিব্য প্রকাশ

মেলায় গতকাল লেখক–প্রকাশকদের অনেকেই এসেছিলেন। কথাপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে কথা হলো প্রকাশক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। এবার মেলায় সর্বাধিক সংখ্যক গুণমানে উন্নত বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে। প্রকাশক বললেন, ২০০৪ সাল থেকে তাঁরা মেলায় অংশ নিচ্ছেন। প্রথম থেকেই তাঁদের লক্ষ্য ছিল ভালো বই প্রকাশ করা। তাঁরা তাড়াহুড়া করে কোনো বই প্রকাশ করেন না। তাঁদের নিজস্ব সম্পাদনা পরিষদ আছে। সেখান থেকে পাণ্ডুলিপি মনোনয়ন ও সম্পাদনা করা হয়। এ কারণে তাঁদের বই নির্ভুল ও মানসম্মত হয়। শুধু মেলাকেন্দ্রিক নয়, সারা বছর তাঁরা বই প্রকাশ করেন। মেলাকে লক্ষ্য করেই যদি ভালো বই করতে হয়, তবে মননশীল বইয়ের ক্ষেত্রে জুলাই মাসের মধ্যেই পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করে ছাপার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। মেলার আগে ১০-১৫ দিনের মধ্যে পাণ্ডুলিপি নিয়ে বই ছাপিয়ে আনলে তা ত্রুটিমুক্ত ও মানসম্মত হবে না বলে তাঁর অভিমত। বইমেলাকে বারোয়ারি উৎসবে পরিণত না করে এটিকে প্রকৃতই বই উৎসবে পরিণত করতে হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকিট বা অনলাইনে নিবন্ধন এমন কিছু করা যেতে পারে। বই না কিনে অনাবশ্যক মেলায় এসে সেলফি তোলা আর ভিড় বাড়িয়ে প্রকৃত গ্রন্থানুরাগীদের অসুবিধা সৃষ্টি করার চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার।  

নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস দন্ত্যস রওশন পাঞ্জেরী

এবার মেলায় বই না কিনে ছবি তোলার হুজুগের প্রতি অধিকাংশ প্রকাশকই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রচুর লোক কিন্তু বিক্রি কম, এমন কথা শোনা গেছে প্রায় প্রত্যেকের মুখে। এ কারণে বইমেলায় এই উটকো ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য কী করা যায়, সে বিষয়ে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে একটি উপায় খুঁজতে পারে বলে মন্তব্য করলেন বিদ্যাপ্রকাশের প্রকাশক মজিবর রহমান। তিনি বললেন, প্রতিষ্ঠানের সুনাম বজায় রাখতে তিনি বরাবরই সংখ্যায় কম হলেও মানসম্মত বই প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে প্রকৃত পাঠকেরা অনেক সময়ই ভালো বইটি খুঁজে নিতে পারেন না।

মেলা প্রাঙ্গণে দেখা হলো প্রবীণ চিত্রশিল্পী বীরেন সোমের সঙ্গে। তিনি বললেন, মেলায় এবার কোনো পথনির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। বসার ব্যবস্থাও বিশেষ নেই। তাঁর মতো বয়স্ক লোকদের খুবই কষ্ট হচ্ছে এত বড় মাঠে হেঁটে হেঁটে নির্দিষ্ট স্টলটি খুঁজে নিতে। আগামী মেলায় এই দিক আয়োজকেরা যেন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন। এবার মেলায় নিখিল প্রকাশন থেকে এসেছে আত্মজীবনীমূলক বই বাংলাদেশের চিত্রকলার বিকাশ ও আমার শিল্প অভিযাত্রা। বইটি সম্পাদনা করেছেন শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা।

নতুন বই

থাংলিয়ানা থমাস হারবার্ট লুইন অনুবাদ: হারুন রশীদ কথাপ্রকাশ

গতকাল তথ্যকেন্দ্রে নতুন বইয়ের নাম এসেছে ২১৯টি। মেলায় প্রথমা প্যাভিলিয়নে নতুন বইয়ের মধ্যে ফরহাদ খানের শব্দের অর্থ ও নেপথ্য কারণ নিয়ে অভিধানমূলক বই শব্দের গল্প, মহিউদ্দিন আহমদের প্লাবনভূমির মহাকাব্য: পলাশী থেকে পাকিস্তান, গওহার নঈম ওয়ারার গবেষণামূলক স্বাধীনতার ৫০ বছর: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অর্জন বইগুলো ভালো চলেছে।

অন্য নতুন বইয়ের মধ্যে ঘাসফুল এনেছে ফয়েজ আলমের গবেষণামূলক বাঙালির ইতিহাসচর্চার পথের কাঁটা, কথাপ্রকাশ এনেছে হারুন রশীদ অনূদিত থমাস হারবার্টের পার্বত্য চট্টগ্রামে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার রোমাঞ্চকর অভিযান: থাংলিয়ানা, দিব্যপ্রকাশ এনেছে মো. মাহমুদ আলীর গবেষণা পূর্ববঙ্গের জমিদার বাড়ি, পাঞ্জেরী এনেছে দন্ত্যস রওশনের নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস। 

আমার পৃথিবী: দর্শন। সমাজ। রাজনীতি

সরদার ফজলুল করিমের পৃথিবী ছিল নিরন্তর অনুসন্ধানের। বিপুল বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞতা আর অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর জীবন। তাঁর দার্শনিক মন সারাক্ষণ জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানা জটিল জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে ফিরেছে। ডায়েরি-আশ্রিত তাঁর লেখা নিয়ে আমার পৃথিবী: দর্শন সমাজ রাজনীতি বইটি এনেছে প্রথমা প্রকাশন। সরদার ফজলুল করিমের চিন্তাজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে বইটি।

সরদার ফজলুল করিমের জন্ম বরিশালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অধ্যয়ন শেষে সেখানেই দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষকতায় যুক্ত হন। শোষণমুক্ত মানবতাবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বামধারার আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হন ছাত্রজীবনেই। ১৯৫৪ সালে কারাবন্দী অবস্থায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। কাজ করেছেন বাংলা একাডেমিতে। পরে সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০১১ সালে জাতীয় অধ্যাপকের পদমর্যাদা লাভ করেন। প্রথমা থেকে প্রকাশিত তাঁর আরও বই—আত্মজীবনী ও অন্যান্য, আমার প্রিয় মুখ এবং আমার জানালা