Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রাবাস নাকি ‘ভূতের বাড়ি’

সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ে এ ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে

শেওলা ও পানি জমা জরাজীর্ণ ভবন। প্রবেশের ফটকও অন্তত পাঁচ ফুট মাটির নিচে। সিঁড়ি থেকে নিচতলার দিকে ঢুঁ মারতেই দেখা যায়, সেখানে পানি জমে আছে। দ্বিতীয় তলার অধিকাংশ দেয়ালে ফাটল। পেছনের দিকে ভেঙে পড়েছে ভবনের দেয়াল। চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রাবাসের চিত্র এটি। শিক্ষার্থীদের কাছে ভবনটি এখন পরিচিত ‘ভূতের বাড়ি’ হিসেবে। প্রায় ২০ বছর ধরে সংস্কার ও পরিচর্যার অভাবে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস ভবনটি।

একই অবস্থা চট্টগ্রাম নগরের আরও তিনটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের। বিদ্যালয়গুলো হলো নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়। চারটি ছাত্রাবাসের কোনোটিতেই এখন শিক্ষার্থী নেই।

চারটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৩০০। শিক্ষক আছেন দুই শতাধিক। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা।

গত ২৭ জুলাই এই চার বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবন ঘুরে দেখা যায়, বাকলিয়া ও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবন এরই মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানায়, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় প্রায় ২৩ বছর ধরে ছাত্রাবাস দুটি পরিত্যক্ত। অন্যদিকে কলেজিয়েট ও মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সেগুলোও এখন বসবাসের উপযোগী নয়।

বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবনটির নিচতলা জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। এ ভবনটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে

নিচতলায় জলাশয়

বাকলিয়া ও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবন দুটি ১৯৬৭ সালে নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ছাত্রাবাস প্রায় ১৫০ আসনের। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানায়, ভবন দুটি মূল সড়ক থেকে কিছুটা নিচু এলাকায় হওয়ায় একসময় ভবনে পানি ঢুকতে শুরু করে। একপর্যায়ে নিচতলা জলাশয়ে রূপ নিলে দুটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবনের চিত্র

সরেজমিনে ছাত্রাবাস দুটিতে দেখা যায়, প্রায় একই ধরনের নকশায় নির্মাণ করা হয় ছাত্রাবাস দুটি। পানিতে পরিপূর্ণ হওয়ায় দুটি ভবনের নিচতলায় যাওয়ার আর সুযোগ নেই এখন। ভবন দুটির কোথাও পলেস্তারা খসে গেছে, আবার কোথাও ভেঙে গেছে দেয়াল।  

বাকলিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৯২-৯৩ সালে তিনি বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। সে সময় ছাত্রাবাস ভবনটি ছাত্র-শিক্ষকে পরিপূর্ণ ছিল। করোনার আগে দুজন শিক্ষক জরাজীর্ণ ভবনটিতে থাকতেন। এখন তাঁরাও থাকেন না।

নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রাবাসটিতে দেখা যায়, জরাজীর্ণ হয়ে পড়া ভবনটিতে দুজন শিক্ষক বসবাস করছেন। তাঁদের বসবাস করা কক্ষ দুটির অধিকাংশ স্থানেই পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপম দাশ বলেন, ছাত্রাবাসে থাকা দুই শিক্ষক সম্প্রতি বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। বাসা খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত ছাত্রাবাস ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন তাঁরা।

সংস্কার নেই কয়েক দশক

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রাবাসটির এখন বেহাল দশা

চারটি বিদ্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রাবাস বন্ধ হয় ২০২০ সালে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস বন্ধ হয়েছে এ বছর।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রাবাসটির এখন বেহাল দশা। ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলায় মসজিদ। নিচতলায় সব কটি কক্ষে তালা ঝুলছে। পানি জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে দেয়াল ও পিলারগুলো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৯২৫ সালে নির্মাণ করা ছাত্রাবাস ভবনটি বহু বছর ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সংস্কার হলে অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে পাঠাতে আগ্রহী হবেন।

সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রাবাসটি মূল বিদ্যালয় ভবন থেকে অনেকটা নিচুতে অবস্থিত। শিক্ষকেরা জানান, ছাত্রাবাসের সামনে বর্ষায় পানি জমে থাকে। সামান্য বৃষ্টিতে দেয়াল বেয়ে ভেতরে পানি ঢোকে। তাই সেখানে থাকার মতো অবস্থা নেই।

ছাত্রাবাসের সুপার হেলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রাবাসে পাঁচজন শিক্ষার্থী ছিলেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে তাঁরা বেরিয়ে গেছেন। এর পর থেকে আর শিক্ষার্থী নেই। ভবনটির সংস্কার প্রয়োজন।

নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভবনের ছাদ ও জানালা ভেঙে পড়ছে

কয়েকজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে আগের মতো ছাত্রাবাসের প্রয়োজনীয়তা নেই। অভিভাবকেরাও শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে পাঠাতে চান না। ভবনগুলো ভেঙে সেখানে বিদ্যালয়ের ভবন করা যেতে পারে।

অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন ভিন্ন কথা। নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আবদুল কাদের নামের একজন অভিভাবক বলেন, পরিবেশ ঠিক থাকলে অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে পাঠাবেন। বর্তমানে যে পরিবেশ, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর নির্মাণ, মেরামত, সংস্কার কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রাবাসের গুরুত্ব বর্তমানেও আছে। শিক্ষকেরা ছাত্রাবাস পরিচালনা করতে অনীহা প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে তিনটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছে। সব কটি বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানো হবে।