Thank you for trying Sticky AMP!!

আলোর অভাবে থেমেছে বলধার সূর্যঘড়ি

ছায়ার কারণে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও বিকেল চারটার পর সূর্যঘড়ির কার্যকারিতা আর থাকে না। গতকাল বলধা গার্ডেনে। ছবি: প্রথম আলো

পূর্ব দিকের সুউচ্চ ভবনের কারণে আটকা পড়েছে আলো আসার পথ। তাই আলোর অভাবে সকালে কাজ করে না শতবর্ষী বলধা গার্ডেনের সমবয়সী সূর্যঘড়িটি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য যখন মাথার ওপর উঠতে শুরু করে তখনই কেবল সক্রিয় হয় সময় দেখার প্রকৃতিনির্ভর এই প্রাচীন মাধ্যম। আবার বিকেল গড়ানোর আগেই গাছের ছায়া আর পশ্চিম দিকের অন্যান্য স্থাপনার কারণে উদ্যানের আলো দ্রুত মরে আসে। তাই রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও বিকেল চারটার পর ঘড়ির কার্যকারিতা আর থাকে না।

সোজা কথায় বলা যায়, সূর্যের আলোর সাহায্যে যে ঘড়ির সময় নির্ণয় করা হয় সেটাই সূর্যঘড়ি। ইতিহাস বলছে, এটাই হচ্ছে সময় দেখার জন্য মানুষের তৈরি প্রথম প্রকৃতিনির্ভর মাধ্যম। আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মিসর ও ব্যাবিলনে এমন ঘড়ির উৎপত্তি হয়েছিল। আর ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের জৌলুশ বাড়ানো এই ঘড়ি স্থাপন করা হয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার সময়েই। সেই ১৯০৯ সালে, বলধা এস্টেটের জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর উদ্যোগে।

ঘড়িটার অবস্থান বলধা গার্ডেনের সিবলি (প্রকৃতির দেবী) অংশে। এখানকার মাঝের রাস্তা বাগানটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। বাগানে ঢুকে এই রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে হাতের বামে পড়বে শঙ্খনদ পুকুর। আর ডান পাশে রট আয়রন দিয়ে ঘেরা একটা অর্ধবৃত্তাকার সিমেন্টের স্থাপনা, যার পশ্চিম থেকে পুবে ঢালু হয়ে আবার উঁচু হয়ে উঠেছে। সেখানে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত দাগ কেটে সময় লেখা আছে। মাঝ বরাবর একটি লোহার রড। সূর্য পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে যেতে থাকলে সেই রডের ছায়া ক্রমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায় আর রডের ছায়া পশ্চিম থেকে পূর্বে যায়। সেই ছায়া দেখে বলে দেওয়া যায় কয়টা বাজে।

গতকাল সোমবার দুপুরের পর দেখা যায়, রডের ছায়া বেলা তিনটার ঘরে স্থির হয়ে আছে। এ সময় হাতঘড়িতে সময় দেখাল তার চেয়ে দুই মিনিট বেশি। তবে সূর্যঘড়ির মাঝের অংশে চিহ্নিত সময়ের দাগগুলো মুছে গেছে। এ সময় স্কুল পালিয়ে উদ্যানে আসা কয়েক কিশোর ঘড়িটার সামনে থমকে দাঁড়ায়। নিজেদের মুঠোফোনের ঘড়ির সময়ের সঙ্গে সূর্যঘড়ির সময় মিলে যাওয়ায় উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ে তাদের চোখে-মুখে।

কথা হয় উদ্যানের বন প্রহরী (ফরেস্ট গার্ড) রেজাউল হকের সঙ্গে। তিনি এখানে কাজ করছেন ১৭ বছর ধরে। রেজাউল বলেন, উদ্যানের পূর্ব অংশের উঁচু ভবনটার কারণে সকালের আলো ঘড়ি পর্যন্ত পৌঁছায় না। তবে রোদ থাকলে বেলা ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ঘড়িতে সময় দেখা যায়।

উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক অহিদুল ইসলাম জানান, এই ঘড়ি নিয়ে নতুন দর্শনার্থীদের মধ্যে এখনো আগ্রহ কাজ করে। এ সময় ঘড়ির মাঝের অংশে মুছে যাওয়া সময়ের চিহ্নগুলো সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরাও লক্ষ করেছি। ঘড়িটায় নতুন করে রং করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।’

উদ্যানের ভেতরে শঙ্খনদ লাগোয়া দোতলা বাড়ির নাম ‘জয় হাউস’। পুরোনো কাঠামোতে দোতলায় ওঠার সিঁড়িটা লোহার, সামনে তিন দিকে খোলা বারান্দা। সেখানে দাঁড়িয়ে একনজরেই পুরো বাগানের প্রাকৃতিক শোভা দেখে নেওয়া যায়। জয় হাউসে বসেই বলধা গার্ডেনের ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘ক্যামেলিয়া’। এর বারান্দা থেকে সূর্যঘড়িটাও হয়তো তাঁর নজর এড়ায়নি!