Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদে খাবার পৌঁছাতেই তাদের উদ্যোগ

ঈদের ছুটিতে ঘরে তৈরি খাবার ডেলিভারি দিচ্ছে একাধিক ফেসবুক পেজ ভিত্তিক উদ্যোক্তা। ছবি: সালসা বিলি জান্নাতের সৌজন্যে

ঈদ এলে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সব খাবার দোকান। অসুবিধা থাকুক, অনিচ্ছা থাকুক, তখন রেঁধে খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না অথবা গলগ্রহ হতে হয় স্বজনদের। রান্না ও খাবারের এই অসুবিধায় যাঁরা আছেন, তাঁরাই শুধু জানেন কেমন কাটে এই দিনগুলোতে।

যেখানে সমস্যা, সেখানেই আছে ব্যবসার সুযোগ—এমনটাই বলে থাকেন উদ্যোক্তারা। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন মেখলা, সালসা বিলি, শারমিন জাহানের মতো রাঁধুনিরা। ঈদের ছুটির মতো অচলাবস্থায় জীবন সচল রাখতে ঘরে তৈরি খাবার বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করেন তাঁরা।

এসব রাঁধুনির সন্ধান মেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একজন সংবাদকর্মী সিরাজুম মুনিরা কেনাবেচার একটি গ্রুপে পোস্ট দেন, ঈদ ও তার পরের দিন কেউ খাবার ডেলিভারি দিতে পারবেন কি না? সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সব খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এই ছুটিতেও আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় যারা কাজ চালিয়ে যান, তাঁরা পড়েন বিপাকে। এখান থেকেই খোঁজ করা হয় এমন কারও, যিনি খাবার দিতে পারবেন এ সময়ে।’

সিরাজুম মুনিরার পোস্টের সূত্র ধরেই খুঁজে পাওয়া যায় এমন অনেককে, যাঁরা ঈদের এই সমস্যার সমাধান করার মাধ্যমেই শুরু করেছেন খাবার ঘরে ঘরে পৌঁছানোর উদ্যোগ। তাঁদের একজন সালসা বিলি জান্নাত। সালসা বিলি একসময় কাজ করেছেন উপস্থাপনা ও গবেষণার। এখন সন্তান দেখাশোনার সুবিধার্থে বাড়ি থেকেই যা পারছেন করছেন। সালসা বিলির ব্যবসাটা খুব নতুন। শুরুতে এর–ওর খাবার রান্নার সমস্যা সমাধান দেওয়ার মাধ্যমে শুরু। তবে এখন নিজের মতো একটা পেজ খুলেছেন তিনি।

সালসা বিলি বলেন, ঈদের দিন প্রায় ৪০ জন মানুষের খাবার তৈরি করেছি। ঈদের দ্বিতীয় দিনও আছে এই পরিমাণ খাবারের চাহিদা।

ঈদে সবাই যখন ছুটি কাটান, তখন কাজ করতে কেমন লাগে প্রশ্নের জবাবে সালসা বিলি বলেন, ‘বাড়ির জন্য তো রান্না করতামই, একটু বেশি করে করলাম, এভাবে অন্যের সমস্যাও মিটে আবার আমারও আয় হলো।’

সালসা বিলিদের ক্রেতারাও নিকটজন। সালসা বিলির একজন নিয়মিত ক্রেতা বিজয়া, পেশায় গৃহিণী। যখন অনেক খাবারের প্রয়োজন হয়, তখনই তিনি শরণাপন্ন হন সালসা বিলির। বিজয়া বলেন, ‘বাড়িতে তৈরি খাবার বলে মাঝেমধ্যে খাবার নেই। এতে আমরা ঘরের খাবারের স্বাদ ও মান পাই আর এ রকম ছুটির সময় যখন সব বন্ধ হয়ে যায়, তখন খাবার পাওয়ার সুবিধা তো আছেই।’

সালসা বিলির মতো আরও একজন উদ্যোক্তা শর্মিন জাহান চৌধুরী। শর্মিন তাঁর রান্নাবান্না আর ঘরকন্না নিয়েই বরাবর বেশ খুশি ছিলেন। কখনো ভাবেননি এমন একটা ব্যবসা কখনো দাঁড় করাবেন। শর্মিনের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলের মাথাতেই প্রথমে আসে এমন একটা ব্যবসার কথা। ছেলেই ফেসবুকে পাতা খুলে দেয় মাকে। মাত্র দুই মাস আগে শুরু হওয়া শর্মিনের চৌধুরী’স কিচেন ঈদে প্রায় ২০ জন মানুষের খাবারের জোগান দিয়েছে, ঈদের পরদিন দিচ্ছে আরও ৪০ জনের। শর্মিন বলেন, ‘কিছু একটা করছি এটা খুব আনন্দের। ক্রেতারা ফিরে ফিরে অর্ডার দেন। কদিনে তৈরি এই সম্পর্কগুলো বেশ আপন মনে হয়, তাই ঈদে তাদের জন্য সানন্দেই রান্না করি।’

উত্তরা এলাকায় যারা ঈদের দিনে খাবার পাওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন, তাঁদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন মেখলা। তাঁর ফেসবুক পেজের নাম, মেখলা'স কিচেন। মেখলা একজন শ্রবণপ্রতিবন্ধী, কিন্তু এটা তার কাজের পথে প্রতিবন্ধকতা হতে দেননি স্বামী মাহদী মাহমুদ। মেখলা দিব্যি ফেসবুকে খাবারের অর্ডার নেন আর মাহদী ও তাঁদের দুই ছেলে খাবার পৌঁছে দেন ক্রেতাদের কাছে। এই ঈদ উপলক্ষে তাঁরা প্রায় ৩০০ জন মানুষের খাবার তৈরির চাহিদা পেয়েছেন। মাহদী বলেন, ‘ব্যবসাটা মেখলা শখের বশে শুরু করলেও কাজটা ভালো যাচ্ছে। এখান থেকে যেমন পারিবারিক আয় আসছে, তেমনি আমাদের মানুষের সঙ্গে একটা সুসম্পর্কও গড়ে উঠেছে।’

খাবারের এ ধরনের ব্যবসায় সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো। এই সমস্যার সম্মুখীন হন তাঁরা প্রায় সবাই। সাধারণ কুরিয়ার সার্ভিসগুলো এভাবে খাওয়া পৌঁছানোর কাজ করতে রাজি হয় না। ফলে, হয় ক্রেতাকে বিক্রেতার বাড়ি থেকে খাবার নিতে হয়, না হলে বিক্রেতাকে খাবার পৌঁছে দিতে হয় ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি। আর ঈদে তো সব ধরনের কুরিয়ার বন্ধ। তাই নিজেদের হাতে হাতে পৌঁছানো ছাড়া আর উপায় কী? এসব সমস্যা মেনে নিয়ে একদম ছোট পরিসরে ব্যবসা করছেন তাঁরা। খুব যে অখুশি তাঁরা এমনও নয়।

ঘরে তৈরি মিষ্টি, বরফি, হালুয়া ইত্যাদির ব্যবসা করছেন জেসমিন আক্তার। তাঁর মেয়ে সালওয়া মোস্তফা দেশের বাইরে থাকেন অনেক বছর। অবসরের পরে একা বাড়িতে সময় কাটানোর জন্য তিন বছর আগে মিষ্টি বানানোর অভ্যাসটাই বেছে নিয়েছেন জেসমিন। মেয়ে সালওয়াই ফেসবুকে গ্রুপ খুলে দিয়েছেন, নাম মিঠাইমণ্ডা। সেখানে অর্ডার করেন ক্রেতারা। অর্ডারমাফিক মিষ্টি বানিয়ে নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে বাড়ি বাড়ি ডেলিভারি দিচ্ছেন তিনি।

জেসমিন বলেন, ‘মেয়ে দেশে থাকলে মেয়ের জন্য বানাতাম, এখন ক্রেতারাই আমার ছেলেমেয়ে। আমার বানানো মিঠাই-মণ্ডা তাদের উৎসবকে বর্ণিল করে, এই তো আমার আনন্দ!’