Thank you for trying Sticky AMP!!

একসময় যোগ্য নারীরাই বেশি আবেদন করবেন

ডিকাব ও ঢাকায় সুইডেন দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে আলোচকেরা। ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, উচ্চপর্যায়ে কিছুটা কম হলেও বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষায় ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ও পাসের হার বেশি। আগামী ১০ থেকে ১২ বছর পর এর প্রতিফলন দেখা যাবে। একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগ্য নারীরাই বেশি আবেদন করবেন। তবে এটাও সত্য যে যেতে হবে আরও বহুদূর।

গণমাধ্যমে নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ কম। নেতৃত্বে আসার জন্য নারীর যোগ্যতার পাশাপাশি সমাজের পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। তবে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে আগের তুলনায় সাংবাদিকতায় নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এবং ঢাকায় সুইডেন দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিকাবের আয়োজনে এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নারী দিবসটি উদযাপন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অবদান না থাকলে আফগানিস্তানের মতো অবস্থা হতো বাংলাদেশের।

‘উইমেন লিডারশিপ ইন মিডিয়া: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড ওয়ে টু ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিকাব সভাপতি আঙুর নাহার মন্টি। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এতে স্বাগত বক্তব্য দেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শামীম আরা শিউলী।

সেমিনারের বিশেষ অতিথি সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লট্টা স্লাইটার এবং জাতিসংঘের ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করেন। তাঁরাও বলেন, এই ক্ষেত্রে এখনো হতাশাজনক চিত্র বিরাজ করছে। নারীরা অপরাধ, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিটে কাজ করলে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন।
দৈনিক ইত্তেফাক–এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন জানান, তাঁর মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতা করছেন এবং তাঁকেও সেখানে নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বললেন, ‘নিজে যখন পাক্ষিক অনন্যা শুরু করতে চেয়েছি, তখন পরিবার থেকেই বলা হয়েছিল, পারব তো? টাকাটা নষ্ট হবে না তো? তবে ওই পাক্ষিক অনন্যা থেকে আজ আমি ইত্তেফাক–এর সম্পাদক হয়েছি। তাই হাল ছাড়লে চলবে না।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি দুবার এ পদে পুরুষ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জিতেছি। জাতীয় প্রেসক্লাবে বেশির ভাগ সদস্য পুরুষ, তাই এই পুরুষেরাই আমাকে নির্বাচিত করেছেন। এ পদে দায়িত্ব পালনের আগে আমার কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। তবে এখন আমার অনেক শত্রু। অফিস ও বাইরে অনেকেই বলে বেড়ান, আমি নিজের কাজ না করে রাজনীতি করে বেড়াচ্ছি।’
ফরিদা ইয়াসমিন বললেন, ‘সমাজের সব পুরুষ কিন্তু নারীর চলার পথে বিরোধিতা করেন না, বিরোধিতা করেন স্বল্পসংখ্যক পুরুষ। তাই ওই স্বল্পসংখ্যক পুরুষকে বলতে চাই, নারীকে সহযোগিতা না করেন সমস্যা নেই, নারী নিজের শক্তিতেই নিজের জায়গা করে নিতে পারবে। শুধু বিরোধিতা করবেন না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত নারীর কাজকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা হয়। নারীকে দমিয়ে রাখার জন্য তাঁর পোশাক, শরীরসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা শোনানো হয়।
সেমিনারের উন্মুক্ত আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক সামিয়া হালিম, সাবেক ডিকাব প্রেসিডেন্ট মাঈনুল আলম, ডিকাবের সদস্য শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, রাশেদ মেহেদী, ইশরাত জাহান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। তাঁরা গণমাধ্যমে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে গণমাধ্যমে অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বাড়ানোর পাশাপাশি নারীর যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।