Thank you for trying Sticky AMP!!

ঐতিহ্যের খাল এখন ময়লার ভাগাড়!

ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল আবর্জনায় ভরে গেছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

একসময় ঢাকার কেরানীগঞ্জে সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল শুভাঢ্যা খাল। এতে মাছ শিকার করে চলত অনেকের জীবন। খালে চলত বড় বড় নৌযান—যাত্রীবাহী, মালবাহী। এখন খালে চলাচল তো দূরের কথা, পাশ দিয়েও হাঁটা দায়। সাত কিলোমিটার খালটির প্রায় অর্ধেক পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।

সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ, কালীগঞ্জ বাজার জোড়া সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গার্মেন্টসের টুকরো কাপড় ও বাজারের বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল। নয়া শুভাঢ্যা, কদমতলী, চরকুতুব, ঝাউবাড়ি, বেগুনবাড়ি, গোলামবাজার ও শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন শমসেরপুল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনা ও গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলায় খালের অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুভাঢ্যা খালে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে চর কালীগঞ্জ এলাকা হয়ে গোলাম বাজার এলাকা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। খালের ৩ কিলোমিটার অংশের উভয় পাশের ১৮৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি খাল পুনরায় খনন করে সেখানে নাব্যতা সৃষ্টি করা হয়। পরে ২০১২ সালের জুলাইয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে খালটি খনন ও উদ্ধারের কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ পুনরায় খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণকাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ওই সময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খালের ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণসহ খালের দুই পাশে ব্লক বসিয়ে পানিপ্রবাহ সৃষ্টির প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। চলতি বছরের শুরু থেকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি এবং কাবিখা প্রকল্পের আওতায় খালের একই অংশে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বর্জ্য অপসারণ ও নাব্যতা সৃষ্টির কাজ করা হয়। তবে ভরাট-দূষণ থামছে না।

শুভাঢ্যা ইউনিয়নের গোলামবাজার এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এই খালে গোসল করেছি, খালের পানি পান করেছি। এলাকাবাসীর স্বার্থে সরকারের উচিত খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।’ তিনি বলেন, ‘শ্যামবাজার থেকে মালামাল নিয়ে নৌকাযোগে সরাসরি গোলামবাজার ঘাটে আসতাম। এখন সেই সুযোগ নেই। খাল ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দুর্গন্ধের কারণে খালের কাছে দিয়ে যাওয়া যায় না। জনগণের স্বার্থে খালটি দূষণমুক্ত করা উচিত।’

পূর্ব আগানগর গুদারাঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি রহিম বখস বলেন, ‘এই খালটিতে নৌকা চালিয়ে আমি একসময় জীবিকা নির্বাহ করতাম। এই খাল দিয়ে গোলামবাজার হয়ে যাত্রী নিয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজারে যেতাম। বর্তমানে খাল এমনভাবে ভরাট হয়েছে, যে এতে প্রবেশ করাই মুশকিল। এ অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে আগানগর গুদারাঘাট থেকে ওয়াইজঘাট এলাকায় যাত্রী পারাপার করছি।’

শুভাঢ্যা কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রঞ্জন দাস বলেন, ‘এই খালটি আমাদের আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। বড় বড় নৌযান এই খাল দিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থায় নেই। ভরাট ও দূষণে খাল এখন মৃতপ্রায়।’ তিনি বলেন, সরকার যদি এই খাল উদ্ধারে এগিয়ে আসে, খালটি আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা চাই খালটি দখল-দূষণমুক্ত করা হোক। খালে যাতে টুকরো কাপড় ও ময়লা-আবর্জনা ফেলা না হয়, সে জন্য সমিতির পক্ষ থেকে ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র ফেলতে একাধিক গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলো দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল যেকোনো মূল্যে দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে। এরপরও যারা আইন অমান্য করে খালদূষণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৭ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের সব খাল উদ্ধারে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খালের এসব স্থাপনা ভেঙে দেব।’