Thank you for trying Sticky AMP!!

ওয়াসায় এখন দুই ‘এমডি’

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে এখন কার্যত দুজন দায়িত্ব পালন করছেন। ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। অন্যদিকে তাঁর ছুটিকালীন সময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমডির দায়িত্ব পাওয়া ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেমও নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন। একসঙ্গে দুজন এমডির দায়িত্ব পালন ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করছেন ওয়াসার একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

চিকিৎসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গত ২৭ এপ্রিল থেকে তিন মাসের জন্য ছুটিতে রয়েছেন তাকসিম এ খান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ওয়াসার এমডির ছুটির আদেশ হয় গত ১৬ মার্চ। ওই আদেশে ২০ মার্চ থেকে ১৯ জুন অথবা যাত্রা শুরুর দিন থেকে তিন মাসের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। আদেশে আরও বলা হয়, এমডির ছুটির সময় ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) রুটিন (নিয়মিত) দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশে তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমডির দায়িত্ব পালন বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বিভিন্ন নথিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বাক্ষর করছেন পরিচালক আবুল কাশেম। অন্যদিকে তাকসিম এ খান নিয়মিত ওয়াসার বিভিন্ন সভায় অনলাইনে অংশ নিচ্ছেন। ই-নথির মাধ্যমে তিনিও বিভিন্ন নথিপত্রে স্বাক্ষর করছেন। গত ৩১ মে ওয়াসার এমডি বরাবর পাঠানো একটি মুঠোফোন কোম্পানির বিলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন আবুল কাশেম। গত ১৬ জুন ওয়াসার একজন কর্মীর অবসর ভাতাবিষয়ক নথিতেও এমডি হিসেবে তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ছুটিতে থেকেও এমডি হিসেবে নথিতে সই করছেন তাকসিম এ খান। আবার ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্বে থাকা আবুল কাশেমও সই করছেন নথিতে।

অন্যদিকে ৬ জুলাই ওয়াসা ভবনে অবস্থিত ঢাকা ওয়াসা বহুমুখী সমবায় সমিতি কার্যালয়ের জায়গা খালি করাসংক্রান্ত অফিস আদেশের খসড়ায় এমডি হিসেবে স্বাক্ষর করেন তাকসিম এ খান। গত ৬ মে অনুষ্ঠিত ওয়াসার ২৭৯তম বোর্ড সভাতেও (ভার্চ্যুয়াল) এমডি হিসেবে অংশ নেন তিনি।

ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এটি এক বনে দুই সিংহের মতো অবস্থা। বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাগজে এমডি হিসেবে স্বাক্ষর করেন তাকসিম। কম গুরুত্বপূর্ণ কাগজে স্বাক্ষর করছেন আবুল কাশেম। একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় একই সময়ে দুজন এমডির বিষয়টি নজিরবিহীন।

২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। নাগরিক সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা বিতর্কের মুখে পড়লেও ওয়াসার এমডি পদে দফায় দফায় নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ষষ্ঠবারের মতো তাকসিমকে ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয় গত বছরের ১ অক্টোবর। প্রতিবারই তাঁর নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

দুজন এমডির দায়িত্ব পালন বিষয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাবে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমডি হিসেবে ‘টেলিহোম সার্ভিসের’ মাধ্যমে এমডির দায়িত্ব পালন করছেন তাকসিম এ খান। যেখানে এমডির সশরীর উপস্থিত থাকা প্রয়োজন, সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক আবুল কাশেম এমডির প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং প্রয়োজনে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।

ছুটিতে থাকা অবস্থায় তাকসিম এ খান কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। নথিতে স্বাক্ষর করলে দুটি বিষয় হবে, হয় তিনি আর ছুটিতে নেই, নয়তো তাঁর স্বাক্ষর অবৈধ।
মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী তাকসিম এ খান ছুটিতে আছেন—এই প্রশ্নের জবাবে বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, এ বিষয়টি মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। লিখিত জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা সুন্দরভাবে চলছে। পরিচালনায় কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু কিছু সাংবাদিকের।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) মুহম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী, এমডির দায়িত্বে আছেন ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম। আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে আবুল কাশেমের সঙ্গে।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তাকসিম এ খান এক অফিস আদেশে নিজেকে ‘অনলাইন এমডি’ ঘোষণা করে যান। ওই অফিস আদেশে বলা হয়, বিদেশে অবস্থানের সময় যেকোনো পলিসি (নীতি) এবং অন্যান্য বিষয়ে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।

ছুটিতে থেকেও দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জানতে তাকসিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে প্রশ্ন পাঠানো হয়, তিনি সেটি দেখলেও কোনো উত্তর দেননি। রুটিন দায়িত্বে থাকা পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ছুটিতে থাকা অবস্থায় তাকসিম এ খান কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। ছুটিতে থাকা অবস্থায় নথিতে স্বাক্ষর করলে দুটি বিষয় হবে। এর একটি হবে হয় তিনি আর ছুটিতে নেই, নয়তো তাঁর স্বাক্ষর অবৈধ। আর রুটিন দায়িত্বে থাকা আবুল কাশেম অর্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বাক্ষর করতে পারেন না।